খোসপাঁচড়া, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ‘স্ক্যাবিস’ বলা হয়। স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া একটি প্যারাসাইটিক বা পরজীবী চর্মরোগ। এটি এক ধরনের সংক্রামক চর্মরোগ, সারকোপ্টেস স্ক্যাবিই নামক এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরজীবীর মাধ্যমে হয়ে থাকে। চোখে দেখা না গেলেও এই পরজীবী আমাদের ত্বকের নিচে গর্ত করে বাসা বাঁধে ও ডিম পাড়ে। ফলে তীব্র চুলকানি ও ত্বকে দানা বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়। স্ক্যাবিস কেন হয়এটি একটি সংক্রমণযোগ্য রোগ, অর্থাৎ একজনের থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। স্ক্যাবিস হয়েছে এমন কারো সরাসরি সংস্পর্শ, সংক্রমিত ব্যক্তির জামা-কাপড়, বিছানা, তোয়ালেসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের জীবাণু একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। পরিবার, হোস্টেল, মাদ্রাসায় একজন আক্রান্ত হলে দেখা যায় বাকি সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। যারা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তি এলাকা, হোস্টেল, মাদ্রাসায় যেখানে অনেকে একসঙ্গে থাকেন এমন পরিবেশে স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া খুব বেশি ছড়ায়। সঠিক চিকিৎসা না হলে স্ক্যাবিসের কারণে কিডনিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে।লক্ষণ১.স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া হলে সারা শরীরে চুলকানি হয়। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁকে, কবজি, কনুই, বুকের নিচে, বগলের নিচে, পেটে, নাভির চারপাশে, পায়ের দুই পাশে চুলকানি বেশি অনুভূত হয়।২. চুলকানি রাতে বেশি হয়।৩. ছোট ছোট র্যাশ বা ফুসকুঁড়ির মতো হয়।৪. চিকিৎসা না হলে দীর্ঘদিন চুলকানির ফলে একসময় ঘা এর মতো হয়ে যায়, সংক্রমিত হয়ে যায়।এ ছাড়া নরওয়েজিয়ান স্ক্যাবিস নামে এক ধরনের স্ক্যাবিস আছে যা ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস নামেও পরিচিত। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অনেক বেশি বয়স, কোনো রোগের কারণে দীর্ঘদিন বিছানায়, এইচআইভি আক্রান্ত রোগী, তাদের মধ্যে এটি দেখা যায়। ক্রাস্টেট স্ক্যাবিস হলে শরীরে স্কেলিং হয় অর্থাৎ চামড়া উঠতে থাকে, চামড়ার স্তর জমে জমে পুরু হয়ে যায়।চিকিৎসাস্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়ার চিকিৎসায় পারমিথ্রিন, প্রোটামিটেন, সালফার ক্রিম দেওয়া হয় রোগীকে। এর পাশাপাশি মুখে খাওয়ার কিছু ওষুধ দেওয়া হয়।আমাদের দেশে স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি পারমিথ্রিনি ক্রিম ব্যবহার করা হয়। রোগীর বয়স অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পারমিথ্রিন ক্রিম গলা থেকে পা পর্যন্ত ভালো করে শরীরের সব জায়গায় লাগাতে হবে। ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা রাখতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নিতে হবে।সতর্কর্তা: পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। এমনকি যাদের কোনো উপসর্গ নেই, তাদেরও চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ব্যবহৃত চাদর, বালিশ, জামাকাপড় গরম পানিতে ধুয়ে রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। বিছানা, তোয়ালে ও জামাকাপড় আলাদা করে ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসার পরও চুলকানি ২–৩ সপ্তাহ থাকতে পারে। তবে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।পরামর্শ: খোসপাঁচড়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়, এটি একটি সাধারণ সমস্যা এবং দ্রুত ছড়ায় এমন রোগ, যা সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভালো হওয়া সম্ভব। একে অবহেলা করলে পরিবারের সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। এ জন্য কালক্ষেপণ না করে উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীসহ পরিবারের সবাইকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।এবি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর