নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অ্যাপ্লাইড কেমেস্ট্রি ও কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (এসিসিই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রী পরিবর্তনের দাবিতে ৬০ দিন ধরে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। এতে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। বিগত ২৫ ফেব্রুয়ারি দাবি আদায়ে সকল ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয় নোবিপ্রবির ACCE ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অ্যাপ্লাইড কেমেস্ট্রি ও কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে বর্তমানে BSc Honours/MSc Honours ডিগ্রী প্রদান করা হয়। যার কারণে চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি Honours/Masters in Applied Chemistry and Chemical Engineering ডিগ্রির পাশাপাশি BSc/MSC Engineering in Applied Chemistry & Chemical Engineering ডিগ্রি দেওয়া। শিক্ষার্থীরা জানায়, গতবছরের ২৯ সেপ্টেম্বর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। এবং বিভাগ থেকেও প্রশাসনের প্রতি সুপারিশপত্র জমা দেয়। তারপরও প্রশাসন শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি আমলে না নিয়ে স্বৈরাচারে সময়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকে এবং শিক্ষার্থীদের সাথে প্রহসন শুরু করে বলে অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে গত ৬০ দিন থেকে আন্দোলন করে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেন তারা। এ বিষয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা নোবিপ্রবির অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এসিসিই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা, গত দুই মাস ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদানের দাবিতে আন্দোলন করছি। এ দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের এবং তা বাস্তব ও যৌক্তিক। বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও সমাধান প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, সদিচ্ছা থাকলে দ্রুত এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। করোনা, আন্দোলন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ইতোমধ্যে আমাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ—দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন।২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গত ২ মাস ধরে নোবিপ্রবির এসিসিই ডিপার্টমেন্ট সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে আছে, যা আমাদের একাডেমিক জীবন ও ভবিষ্যৎকে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। আমাদের সাবজেক্ট ‘Applied Chemistry and Chemical Engineering’ (ACCE) ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে, এবং আমরা যেসব কোর্স পড়ছি তা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার অংশ। অথচ ডিগ্রির টাইটেল ‘অনার্স’ হওয়ায় আমরা চাকরি ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্যের মুখে পড়ছি। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার, যথাযথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিশ্চিত করার দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দাবি পুরোপুরি যৌক্তিক। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি, ডিপার্টমেন্টের যেসব কাঠামোগত পরিবর্তন ও সংযোজন প্রয়োজন, তা দ্রুত সম্পন্ন করে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিশ্চিত করুন এবং আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনুন।২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তি হওয়ার সময় নোবিপ্রবির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ACCE) বিভাগ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর জানতে পারি, এখানে কেবল অনার্স ডিগ্রি দেওয়া হয়। এতে আমরা ও আমাদের পরিবার হতাশ হই। দাবি নিয়ে বিভাগ ও প্রশাসনের কাছে গেলে শুরুতে আশ্বাস পেলেও পরে একের পর এক জটিলতা তৈরি হতে থাকে। প্রায় দুই মাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ। অন্যান্য বিভাগ প্রথম সেমিস্টার শেষ করলেও আমরা এখনও শুরু করতে পারিনি। আমরা চাই, প্রশাসন দ্রুত ‘ইঞ্জিনিয়ারিং ইকুইভ্যালেন্ট অনার্স’ ডিগ্রির বিষয়ে পদক্ষেপ নিক এবং শিক্ষাজীবনের স্থবিরতা দূর করে আমাদের ক্লাসে ফেরার ব্যবস্থা করুক।” এ বিষয়ে এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড.মো: আশরাফুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের কাছে যে সংশোধিত কারিকুলাম চেয়েছেন সেটা আমরা চূড়ান্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। আমরা নিয়মিত প্রশাসনের সাথে নিয়মিত এ ব্যাপারে যোগাযোগ আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক বলেন, ডিগ্রী পরিবর্তন করার জন্য কারিকুলামেও কিছু বিষয় সংযোজন বিয়োজনের প্রয়োজন আছে। সেজন্য আমরা একটা কমিটিও গ্রহণ করেছি এবং উক্ত কমিটি ইতিমধ্যেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে। আমরা রিপোর্ট গ্রহণ করেছি এবং সে রিপোর্ট নিয়ে আমরা একাডেমিক কাউন্সিলে কথা বলবো। এছাড়াও আমরা বাংলাদেশ বিশ্বিবদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউসিজি) তে নিয়মিত এ ব্যাপারে যোগাযোগ করছি।এসকে/আরআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর