সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানানোর পরও শেষ রক্ষা হলোনা ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান সোহাগের দোকানঘর। গত বুধবার (৯ এপ্রিল) সাতক্ষীরা সদরের বাকাল-ভাড়–খালী খাল খননের জন্য ভাড়–খালী বাজারে খালের দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে যেয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে থাকা পাকা দোকানঘর ভেঙে তছনছ করে দেই সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে সাড়ে ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানান ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান সোহাগ।শনিবার (১২ এপ্রিল) সরেজমিনে ভাড়–খালী বাজারে যেয়ে দেখা যায়, খাল খননের স্বার্থে ভাড়–খালী বাজারের ব্রিজের উভয় পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। চলছে খাল খননের কাজ। ব্রীজের উত্তর পূর্বপাশে মনিরুজ্জামান সোহাগের পাকা দোকানঘরটিও তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। খালের ভেতরেসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইট। জানতে চাইলে মাহমুদপুর গ্রামের ছালেক গাজীর ছেলে মনিরুজ্জামান সোহাগ বলেন, স্থানীয় রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে ব্রীজের পাশে আমি কয়েকটি পাকা দোকানঘর নির্মাণ করি। এরপর ওই জমি আমি আমার বড় বোন নারগীছ পারভিনের কাছে বিক্রি করে দেই। তবে জমিতে থাকা দোকানঘরগুলো আমার ভোগদখলে ছিল। ওই দোকনগুলোতে ব্যবসা করে আমি আমার সংসার চালাচ্ছিলাম। মাস দেড়েক আগে আমি লোকমুখে জানতে পারি খাল খননের জন্য ব্রীজের দুপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ব্রীজের পাশের অবৈধ স্থাপনার সাথে আমার ব্যক্তি মালিকানাধীন দোকানও ভাংচুর চালানো হতে পারে এই আশংকায় আমি গত ১১ মার্চ সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড(ডিভিশন-১) এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানায়। এরপর সরকারী সার্ভেয়ার এসে মাপজরিপ করে আমার একটি দোকানের আড়াই ফুট খালের জমিতে পড়ে। আমি তখল আমার সেই দোকানটি সম্পূর্ণ ভেঙে নেই। এতে খালের জমি ছাড়াও আমার বোনের জমির প্রায় ৫/৬ ফুট খালি হয়ে যায়। গত বুধবার (৯ এপ্রিল) পানি উন্নয়ন বোর্ড অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে। হঠাৎ দেখি আমার দোকান ঘর ভাংচুর করার জন্য ভেকু মেশিন নিয়ে আসা হচ্ছে। আমি তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজনদের বারবার অনুরোধ করি যে এই দোকান পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে না। এই দোকান আমাদের ব্যক্তি মলিকানাধীন জমিতে। বিষয়টি আমি এসও, এসডিএকে মৌখিকভাবে এবং লিখিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। তবে দুঃখের বিষয় সংশ্লিষ্ঠরা আমার কথায় কোন কর্ণপাত না করে আমার দোকানঘরটি একেবারে ভেঙে দিয়েছে। এত আমি প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এবং ঠিকাদারের লোকজন একটি মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার দোকানঘরটি তছনছ করে দিয়েছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দাবী করছি।স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ, সবুরসহ আরো অনেকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস্ও’র যোগসাজসে ঠিকাদারের লোকজন স্বেচ্ছাচারী হয়ে সোহাগের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে থাকা দোকানঘরটি ভাংচুর করেছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আগে এলাকার কাউকে জানানো হয়নি। খালের ভেতওে গড়ে তোলা স্থাপনা রেখে পানি উন্নয়ন বোর্ড লোকের ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পতি নষ্ট করেছে। খালের দুপাশের অনেক মানুষের ব্যক্তিগত জমিতে থাকা সম্পদ নষ্ট করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আমরা চাই যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের ক্ষতির্পরণ দিয়ে খাল খনন করুক পানি উন্নয়ন বোর্ড।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদারের প্রতিনিধি(সাব ঠিকাদার) রাসেল বলেন, স্থানীয়দের চাপে পড়ে সোহাগ ভাইয়ের দোকানটি আমরা ভাঙতে বাধ্য হয়েছি। যেটি আমাদের ভূল হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সোহাগ ভাইয়ের সাথে কথা বলে সমাধান করবো।সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও বলেন, আমরা ম্যাপিং করে দেওয়ার পরও ঠিকাদারের লোকজন স্থানীয়দের চাপে পড়ে সোহাগ নামের ওই ভায়ের দোকানঘর ভাংচুর করা হয়েছে বলে শুনেছি। ভাংচুর করেছে ঠিকাদারের লোকজন সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।এ ব্যাপারে জানার জন্য সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড(ডিভিশন-১) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দীনের কাছে কল দিলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।এমআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর