রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে এক চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির অনুসন্ধান। সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি, তাদের বিদেশ যাত্রায়ও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত গত সপ্তাহে এই নির্দেশ দেন। এই মামলাটি কেবল একটি ব্যক্তির নয় রাজনীতির আড়ালে গড়ে ওঠা সম্পদের পাহাড় ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।দুদকের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই নজরদারিতে ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। অভিযোগ ওঠে, এমপি থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প, ঠিকাদারি কাজ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক সম্প্রতি তার ও তার স্ত্রীর সম্পদের বিবরণ যাচাই শুরু করে।প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসে, তার নামে ও স্ত্রী নাসিমা বেগমের নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, রাজশাহীতে জমি, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য। এ ছাড়া রয়েছে ব্যবসায়িক শেয়ার ও স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ।দুদকের আইনজীবী মো. মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা আদালতের কাছে আবেদন করেছিলাম যাতে এই সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ না থাকে। আদালত আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে সম্পদ অবরুদ্ধ এবং বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।নথি অনুযায়ী, মোট ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৫১ টাকার সম্পদ আপাতত জব্দ রাখা হবে এবং ওমর ফারুক ও তার স্ত্রী বিদেশে যেতে পারবেন না পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।ওমর ফারুক চৌধুরী ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন এবং একই সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে থাকার সুবাদে প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরে তার প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তার ছত্রছায়ায় রাজশাহীতে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, হোটেল এবং ফার্মেসি ব্যবসা গড়ে ওঠে। একটি সূত্র জানায়, “বেশিরভাগ সম্পদ তার নিজের নামে না হলেও আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের নামে রাখা হয়, যা মূলত তারই নিয়ন্ত্রণে।সাবেক এক উপজেলা চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওমর ফারুকের আমলে যদি কোনো প্রকল্প নিতে চাইতাম, তাহলে তার ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে যেতে হতো। অন্যথায় কোনো কাগজে সই হতো না।স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, তার পরিবারের সদস্যরা রাজশাহীতে যে হারে সম্পদ কিনেছেন, সাধারণ একজন রাজনীতিকের পক্ষে তা অসম্ভব। এটা পরিষ্কার দুর্নীতির ফসল।নাসিমা বেগমের নামে থাকা একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গত পাঁচ বছরে কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য হাতে পেয়েছে দুদক। এছাড়াও, রাজধানীর গুলশান ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার নামে থাকা দুটি ফ্ল্যাট এবং একটি জমির খতিয়ান দুদক সংগ্রহ করেছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক রাজনীতিক নিজেদের সম্পদ স্ত্রী বা সন্তানের নামে রেখে থাকেন যাতে আইনি জটিলতা এড়িয়ে যাওয়া যায়। তবে, এবার সেই কৌশলও ধরা পড়েছে।এই ঘটনা রাজনীতিকদের জন্য একটি বার্তা হিসেবেই দেখছেন অনেক বিশ্লেষক। দুর্নীতির অভিযোগে যখন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তখন একজন সাবেক সংসদ সদস্যের সম্পদ জব্দ এবং বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা সরকারকে জবাবদিহির মুখে ফেলছে।দুদকের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা কেবল এই মামলায় নয়—আরও বেশ কিছু রাজনীতিকের সম্পদের ব্যাপারে তদন্ত করছি। যারা জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”ওমর ফারুক চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চলমান এই অনুসন্ধান যেন কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা না হয়। বরং এটি হতে পারে একটি নজির, যেখানে রাজনীতির ছায়ায় দুর্নীতির চর্চা করে কেউই নিরাপদ থাকতে পারে না। জনগণ এখন প্রশ্ন করছে আরও কত ওমর ফারুক আড়ালে আছে?এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
বাংলাদেশের শততম ওশান গোয়িং জাহাজ কেএসআরএমের জাহান-১
বাংলাদেশের শততম ওশান গোয়িং জাহাজ কেএসআরএমের জাহান-১

বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাবাহী শততম ওশান গোয়িং বাণিজ্যিক জাহাজ ‘এমভি জাহান-১’। বিশ্বের এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ওড়াবে Read more

ঝালকাঠিতে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
ঝালকাঠিতে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

ঝালকাঠির নলছিটিতে পুকুরের পানিতে ডুবে সামিয়া আক্তার (৫) ও সাবিনা আক্তার (৬) নামে দুই চাচাতো বোনের করুণ মৃত্যু হয়েছে।

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন