টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া মিলেনা খাজনা খারিজসহ অন্যান্য সেবা। এ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিজেকে এ অফিসের মালিক দাবি করে তার ইচ্ছামতো চালাচ্ছেন কার্যক্রম। এতে করে এ ইউনিয়নের সেবা গ্রহীতারা সেবা না পাওয়ায় সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে। এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে নারান্দিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা উম্মে মাসুমা দেওয়ানের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি তিনি সেবা গ্রহীতাদের সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের খারাপ আচরণ করে থাকেন বলে সেবা গ্রহীতারা জানিয়েছেন। তার ব্যবহারে অতিষ্ঠ হওয়ায় স্থানীয় জমির মালিকদের মধ্যে অনীহা দেখা দিচ্ছে।সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা উম্মে মাসুমা দেওয়ান এ অফিসে প্রায় ১৪ মাস যাবত কর্মরত রয়েছেন। তিনি ইতিপূর্বে এ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রায় ৫ বছর কর্মরত ছিলেন। আর দুর্গাপুর ভূমি অফিসে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। পরে তিনি নারান্দিয়া ভূমি অফিসে যোগদানের পরপরই স্থানীয় কতিপয় দলিল লেখকের মাধ্যমে গড়ে তুলেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আর ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যম ছাড়া স্থানীয়দের খাজনা খারিজসহ অন্যান্য সেবা মিলে না। একটি খারিজ করতে যেখানে সরকারি খরচ প্রায় ১ হাজার ২ শত টাকা হলেও তিনি ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। তার চাহিদামাফিক টাকা কোন সেবা গ্রহীতা না দিলে কোন ফাইল খারিজ করতে সুপারিশ করেন না। তাঁর নির্দেশে এক অফিস সহায়কের কাছে অনেকেই জমি খারিজ করতে টাকা সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু, কিছু দিন পর ওই অফিস সহায়ক অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান। ওইসব সেবা গ্রহীতারা জমি খারিজ করতে দেওয়া ভুক্তভোগীরা দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন জমি খারিজের জন্য। ভুক্তভোগীরা ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা উম্মে মাসুমা দেওয়ানকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘যার কাছে টাকা দিয়েছেন সে আমাকে কিছু বলে যায়নি। তার কাছে শুনতে হবে।’ এভাবেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা।নারান্দিয়া পশ্চিম পাড়া গ্রামের জাকির হোসেন নামের এক সেবা গ্রহীতা জানান, ‘আমি অনেক অসুস্থ, প্রায় ছয় মাস ধরে ঘুরতেছি খারিজের জন্য। ভূমি কর্মকর্তার নির্দেশে এক অফিস সহায়কের কাছে ৬ হাজার টাকা দিয়ে খারিজ করতে দিয়েছিলাম। কিন্তু, সেই অফিস সহায়ক অন্যত্র চলে যাওয়ায় আমাকে দিনের পর ঘুরানো হচ্ছে। আজ না কাল, কাল না পরশু এভাবেই চলছে।’নারান্দিয়া বাজারের ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া জানান, ‘নারান্দিয়া ভূমি অফিসে খারিজ করতে গেলে আমার একটা কাগজের প্রয়োজন হয়। নায়েব আমাকে জানান, টাঙ্গাইল থেকে ওই কাগজ তুললে আপনার ১৫০০ টাকা লাগবে, আর এখান থেকে নিলে ৫০০ টাকা লাগবে। পরে সেখান থেকেই নিয়ে খারিজ করতে দিতে চাইলে আমার কাছে ৬ হাজার টাকা চাওয়া হয়। এত টাকা লাগবে কেন তাই আমি আর খারিজ করতে দেইনি।’মাইস্তা নয়াপাড়া গ্রামের আবু জায়েদ তালুকদার জানান, ‘খাজনা দিতে গেছিলাম, কোন কিছু না দেখেই আমার কাছে ৪০০ টাকা চান উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। কত বছরে ৪০০ টাকা হয়েছে আমাকে তা তিনি জানাননি।’ স্থানীয় ভুক্তভোগী তথা সেবা গ্রহীতারা এ দুর্নীতি পরায়ণ এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করলে তার শক্তিশালী সিন্ডিকেটের অনেক কিছু বের হয়ে আসবে। পাশাপাশি এ ইউনিয়নের সেবা গ্রহীতার হয়রানি কমলে সরকার পাবে তার কাঙ্খিত রাজস্ব।নারান্দিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা উম্মে মাসুমা দেওয়ানের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের দেখে ফোন হাতে নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে উচ্চস্বরে বলেন, ‘কে বলতে পারবো আমি টাকা নেই, প্রমাণ আনেন।’ পরে এক ভুক্তভোগীর নাম বললে তিনি তাকে সাথে সাথে ডেকে আনেন। ভুক্তভোগী সবার সামনেই সব প্রমাণ করে দেন। পরে তাকে তার চেয়ারে বসতে বললে তিনি বলেন, ‘এটা আমার অফিস, আমি বসে কথা বলবো না, দাঁড়িয়ে কথা বলবো, আপনাদের কাছে শুনতে হবে? আমি ডিসি স্যারের অনুমতি ছাড়া কিছু বলতে পারবো না’ এই বলে তিনি অন্য রুমে ফোন কানে ধরে চলে যান।এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সিফাত বিন সাদেক বলেন, ‘নারান্দিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা উম্মে মাসুমা দেওয়ানের বিরুদ্ধে কেউ যদি অভিযোগ দেয় তবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, অন্য একটি অভিযোগের বিষয়ে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে’ বলে জানান।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর