ছোট্ট একটা প্লাস্টিক ট্যাংকে সাতার কাটছে লাল, নীল, সোনালি রঙের ছোট ছোট গাপ্পি আর মলি মাছ। পাশে সাজানো আরও কিছু কাঁচের অ্যাকুরিয়াম। তাকেই ঘিরে রাজশাহীর পবা উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা প্রতীক হাসানের রঙিন স্বপ্ন। মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শখের বসে শুরু করা মাছচাষ আজ তার জীবনের গতি বদলে দিয়েছে। এই রঙিন মাছ তাকে শুধু আর্থিকভাবেই সাবলম্বী করেনি, বদলে দিয়েছে তার পরিচিতি, চিন্তার দিগন্ত।“আমি একজন ছাত্র। ইউটিউবে ভিডিও দেখে আগ্রহ হয়। শুরুটা ছিল খেলার মতো, কিন্তু এখন এটা আমার উপার্জনের প্রধান উৎস,” বলছিলেন ২৫ বছর বয়সী প্রতীক। পাঁচ বছর আগে যাত্রা শুরু করা এই উদ্যোগ এখন গড়ে প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার মাছ বিক্রি করে। সব খরচ বাদ দিয়ে তার নিট লাভ দাঁড়ায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।প্রতীকের খামারে রয়েছে গাপ্পি, ব্ল্যাক মোর, ফাইটার, এনজেল, কমেট, জেব্রা, কই কার্প, ওরেন্টা গোল্ড, সিল্কি কই, মলি, গাপটি সহ প্রায় ২০টিরও বেশি বিদেশি প্রজাতির রঙিন মাছ। তার এই হ্যাচারি এখন রাজশাহী জেলার বিভিন্ন অ্যাকুরিয়াম দোকানের অন্যতম সরবরাহ কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও সৌখিন খামারিরা মাছ কিনতে আসেন তার খামারে।খামার ঘুরে দেখা গেল, প্রতিটি মাছের প্রজাতি আলাদা ট্যাংকে রাখা। খাবার দেওয়ার সময় মাছগুলো ট্যাংকের ওপরে এসে দলবদ্ধ হয়ে খেতে থাকে। একদিকে চলছে পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা, অন্যদিকে মাছের পোনা সংরক্ষণের জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা শেড। প্রতীক বলেন, “প্রথম দিকে অনেক বাধা এসেছিল, বিদ্যুৎ সমস্যা, পানির অভাব, রোগবালাই সবই সামাল দিতে হয়েছে। তবে ধৈর্য ধরে লেগে থাকার ফলেই আজ এই অবস্থানে এসেছি।”প্রতীকের খামার ঘুরে আসা ক্রেতাদের কেউ কেউ বলেন, “আমরাও তার মতো মাছ চাষে আগ্রহী হয়েছি। প্রতীক দেখিয়ে দিয়েছে, সামান্য পুঁজি দিয়েও সফল হওয়া সম্ভব।”রাজশাহী বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক সরদার মহিউদ্দিন বলেন, “রাজশাহীর পবা ও চারঘাট উপজেলায় এখন সবচেয়ে বেশি বিদেশি রঙিন মাছের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় ১৪ জন উদ্যোক্তা এ খাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। অনেকেই সফল হয়েছেন। আমরা নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তার জন্য নানা কর্মসূচি নিয়েছি।”সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রতীকের মতো তরুণদের স্বপ্ন আর পরিশ্রমের মেলবন্ধনেই বাড়ছে রঙিন মাছের জনপ্রিয়তা। শহরের অ্যাকুরিয়ামপ্রেমীদের কাছে এসব মাছ শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং ঘরের এক কোণে শান্তির বার্তাও বয়ে আনে। সেই বার্তারই বাহক আজ প্রতীক হাসান।প্রতীকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি চাই আরও বড় পরিসরে কাজ করতে, দেশের বাইরেও রপ্তানি করতে চাই এসব রঙিন মাছ।পাশাপাশি অন্যদেরও উৎসাহিত করতে চাই যেন তারাও এ খাতে এসে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারে।”প্রতীকের গল্প শুধু এক তরুণের সাফল্য নয়, বরং দেশের মৎস্য খাতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা। যুব সমাজ যদি তার মতো এগিয়ে আসে, তাহলে গ্রামে বসেই গড়া যাবে টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো, যার কেন্দ্রে থাকবে সৃজনশীলতা, সাহস আর ধৈর্য।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর