ভূমি সংক্রান্ত হয়রানি রোধে সরকার যখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে সচেষ্ট, তখন ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে। অভিযোগ উঠেছে, সেখানে চলমান বিডিএস-১ ডিজিটাল জরিপের আপত্তি স্তরে অনিয়ম, আর্থিক লেনদেন ও পক্ষপাতমূলক রায়ের মাধ্যমে প্রকৃত ভূমি মালিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিশেষ করে উপজেলার চরহাজারী মৌজার আপত্তি শুনানিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ ও ব্যক্তিগত সুবিধার বিনিময়ে পক্ষপাতমূলক রায় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে কর্মরত সব উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে বদলির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই তালিকাভুক্ত সবাই বদলি হলেও অধিদপ্তরে তদবির করে বদলি এড়াতে সক্ষম হন মো. মনিরুল ইসলাম। বদলি ঠেকানোর পর থেকেই ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরহাজারী মৌজার ৪নং ওয়ার্ডের সিএস ৪১২৭ দাগে সরকারি রাস্তা নির্মাণের পর ভূমি মালিক আহছান উল্যাহ ভোগ-দখলে না থেকেও কৌশলে পাশের জমি থেকে ২ শতাংশ জমি রেকর্ড করান। ভুক্তভোগীরা আপত্তি মামলা করলে উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মনিরুল ইসলাম ‘আর্থিক সুবিধার’ বিনিময়ে প্রভাবিত হয়ে আহছান উল্যাহ ভোগদখলে আছেন বলে রায় দেন। যদিও শুনানিতে আহছান উল্যাহ নিজেই বলেন, তিনি ৪১২৭ নয়, ৪১১৯ দাগে জমি কিনেছেন—তবু রায়ে তার পক্ষেই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।ভুক্তভোগী শাহানারা বেগম বলেন, আহছান উল্যাহর খরিদকৃত ২ শতাংশ ভূমির ওপর দিয়ে সরকারি রাস্তা নির্মাণ হলে স্বভাবতই তিনি তার ভূমির মালিকানা হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু তিনি রাস্তার পাশে থাকা আমাদের অবশিষ্ট ভূমি থেকে কপটতার আশ্রয় নিয়ে ২ শতাংশ ভূমি রেকর্ড করে নেন, অথচ ওই ভূমিতে তিনি ভোগ-দখলে নেই। পরে ডিপি প্রকাশিত হলে আমরা আপত্তি মামলা দায়ের করি। তবে উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মনিরুল ইসলাম আমাদের দাবি না মঞ্জুর করে সম্পূর্ণ পক্ষপাতমূলকভাবে আহছান উল্যাহের পক্ষে রায় দেন। অন্যদিকে, একই মৌজার ৩নং ওয়ার্ডের মৃত আমজু মিয়ার পুত্রবধূ বিবি হাজেরা ও নাতি শাহাদাত ওয়ারিশসূত্রে মোট ১০.৮০ শতাংশ ভূমির মালিক হন। সম্প্রতি বিডিএস-১ জরিপে তারা ৩.৬৩ শতাংশ জমি ১৬১০ নম্বর ডিপি খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত করান। আর তাদের পাওয়ার কথা ছিল ৭.১৯ শতাংশ ভূমি। অভিযোগ রয়েছে, উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. মনিরুল ইসলাম যথাযথ ওয়ারিশ হিস্যা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র দখলের ভিত্তিতে বিবি হাজেরার নামে ৫০৫০ নম্বর ডিপি খতিয়ান থেকে অতিরিক্ত ১২.২৫ শতাংশ জমি রেকর্ডভুক্ত করে দেন। এ বিষয়ে মৃত আমজু মিয়ার অপর ওয়ারিশ কন্যারা অভিযোগ জানালেও তাদের কোনো কথা শুনতে রাজি হননি উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মনিরুল ইসলাম। ভুক্তভোগীরা বলেন, পিতার সম্পত্তি আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও তাঁর সন্তান ওয়ারিশসূত্রে যতটুকু পাবে কৌশলে উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মনিরুল ইসলামকে ম্যানেজ করে তার চেয়ে বেশি রেকর্ড করে নেন। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, যা দখলে আছে তাই দিয়েছি। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মনিরুল ইসলামের কার্যালয়ে গেলে ‘বিচারকরা ভুল করেন না’ বলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় ‘আর্থিক সুবিধার’ বিনিময়ে রায় প্রদানের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম নিজের এজলাশ ছেড়ে টয়লেটে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর তিনি বের হয়ে বলেন, ‘ভাই সারাদিন অনেক মামলা শুনানি নিয়ে থাকি, ভুল হতেই পারে।’এ বিষয়ে নোয়াখালী জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, কেউ এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আরইউ
Source: সময়ের কন্ঠস্বর