কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা-বারোমাসিয়ার চরাঞ্চল গুলোতে আবারও শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ফসল কাউনের চাষাবাদ। এই ফসল রক্ষার্থে প্রায় ১৫ বছর পর ধরলার জেগে ওঠা চরে কাউনের চাষাবাদ করেছেন স্বামী পরিত্যক্ত কৃষাণী সারাতুন বেগম (৫৫)।এক সময় অভাবের তাড়নায় দু-বেলা ভাত জোঁটেনি সারাতুন বেগমের। তখন ভাতের বদলে কাউনের ভাত, নাস্তা খেয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন। কাউনের বিভিন্ন খাবার খেয়ে দুই সন্তানকেও মানুষ করেছেন। শুধু সারাতুন বেগমেই না, সে সময় কাউন চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো ধরলা ও বারোমাসিয়ারদ নদীর পাড়ের চরাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু দীর্ঘদিন এ চাষাবাদ বন্ধ রাখেন কৃষকরা। এরই মধ্যে প্রায় ১৫ বছর পর এবার ধরলার চরাঞ্চলে আবার নতুন করে কাউন চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আর এ চাষাবাদে এগিয়ে এসেছে চরাঞ্চলের সারাতুন বেগম। অন্য উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম ফুলমতি এলাকার ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম প্রায় ৩০ বছর পর কাউনের চাষাবাদে এগিয়ে এসেছেন।পশ্চিমফুলমতি এলাকার বারোমাসিয়া নদীর পাড় শহিদুল ইসলাম ও গোরকমন্ডল এলাকার ধরলা পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রখর রোদে কৃষাণী সারাতুন বেগম কাউন ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন।সারাতুন বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার নিজস্ব কোন জমি-জমা নেই বাহে। চরে দেড় বিঘা জমিতে বর্গা নিয়ে কাউনের চাষাবাদ করেছি। আগে ধরলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক কাউনের চাষাবাদ করতেন। এখন আর কাউনের চাষাবাদ হয় না। আগের মানুষ কাউনের চাষাবাদ করতেন। আগে আমরা কাউনের ভাত-পান্তাসহ কাউনের বিভিন্ন খাবার খেয়ে জীবন বাঁচাইছি বাহে, বলে শেষ করা যাবে না। প্রায় এক যুগ ধরে এই চরে কাউনের চাষাবাদ হয় না। কমপক্ষে ১০ বছর পর আমার ভাগিনাসহ দেড় বিঘা জমিতে কাউনের চাষাবাদ করেছি। কেন ১৫ বছর পর কাউনের চাষাবাদ করলেন সারাতুন বেগম ও সুক্কুর আলীকে প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, কাউনের ভাত, পান্তাসহ বিভিন্ন ধরণের খাবারের তৈরি করা যায়। এই খারাব অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তাই আমরা অনেকটা শখের বসে জমি বর্গা নিয়ে কাউনের চাষাবাদ করেছি। জমির মালিককে কাউনের অর্ধেক ফসল দিয়ে বাকি কাউন আমরাই ভাতসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি করবেন। তাদের কাছে চালের ভাতের চেয়ে কাউনের ভাত, পান্তা সুস্বাদু ও পুষ্টির বলে জানান।এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে দেগ যুগ আগেও এসব চরাঞ্চলে ছিল কাউনের আবাদে পরিপূর্ণ। প্রায় দেড় যুগ আগে চরাঞ্চলে কাউনকে ভাতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতেন চরবাসী।পশ্চিমফুলমতি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, আমার বাপ-দাদারা বারোমাসিয়া নদীর তীরবর্তী এলাকায় শতশত বিঘা জমিতে কাউনের চাষাবাদ করেছেন। ওই মঙ্গাঁ ছিল। তখনকার আমলে ধনী-গরিব বলতে গেলে সবাই কাউনের ভাত,পান্তা, নাস্তা খেয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছেন। আস্তে আস্তে মানুষের অভাব দুর হলে এই কাউনের চাষাবাদ প্রায় দুই তিন যুগ থেকে আমাদের এলাকায় কাউনের চাষাবাদ বন্ধ রাখেন চাষিরা। এই অঞ্চলে কাউনের চাষাবাদ বিলুপ্তি হওয়ায় তিনি আবারও কাউনের চাষাবাদ এ অঞ্চলে ফেড়াতে লালমনিরহাট এলাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে পাঁচ শতক জমিতে কাউনের চাষাবাদ করেছেন। তিনি আরও জানান, আগে ধানের চাষাবাদ কম হওয়ায় অধিকাংশ পরিবারে কাউনের ভাত রান্না হতো, কিন্তু বর্তমানসহ প্রায় দেড় দুই যুগ ধরে চরাঞ্চলে ধান ও ভুট্টার চাষাবাদ বেড়ে যাওয়ায় এখন কেউ কাউনের ভাত আর খেতে চায় না। তবে কাউনের ভাত, মোয়া, পায়েস ও নাস্তা খেতে খুবই সুস্বাদ। তাই কাউনের চাষাবাদ করেছি এবং যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন কাউনের চাষাবাদ করবো।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা : নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চরাঞ্চলে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কাউন চাষাবাদেও কিন্তু বেশ উপযোগী। একেবার কম খরচেই চরাঞ্চলে কাউনের চাষাবাদ করা সম্ভব। কৃষি বিভাগ প্রায় সময় চরাঞ্চলের কৃষকদের কাউন চাষের জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছি। কিন্তু তারপরও এ উপজেলায় কাউনের চাষাবাদ প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। যেহেতু এই দুই চাষি পুরাতন (ফসল) কাউনের চাষ করছেন। তাই আশাকরি এই দুই চাষির কাউনের চাষাবাদ দেখে অন্যান্য চাষিরাও কাউনের চাষাবাদে আগ্রহী হবে। এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর