রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির আজ ১২ বছর। এগারো বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারের রানা প্লাজায় ঘটে দেশের ইতিহাসের এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। আটতলা ভবনে অবৈধভাবে স্থাপন করা কারখানাটি ধসে পড়ে নিহত হন এক হাজার ১৩৪ জন। আহত হন আরও দুই হাজারের বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তাদের সবাই পোশাক শ্রমিক। এটি বিশ্বের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এই হৃদয়বিদারক এ ঘটনা শুধু দেশ নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নাড়া দিয়েছিল গোটা বিশ্বকেও। তবে দীর্ঘ ১২ বছরেও আজ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি চারটি মামলার একটিও, শেষ হয়নি বিচার। তিন বছর আগে শুরু হওয়া সাক্ষ্যর ৫ ভাগের একভাগও শেষ হয়নি। মামলার ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ৮৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ বর্তমানে চলমান রয়েছে। সবশেষ চলতি বছরের ২১ এপ্রিল মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। এদিন চারজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। চারজনের মধ্যে তিনজনের জেরা শেষ হলেও একজনের জেরা শেষ হয়নি। ২৮ এপ্রিল মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালত নতুন দিন ধার্য করেন।অন্যদিকে একই ঘটনায় দায়ের করা ইমারত নির্মাণ আইনের মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে। মামলা স্থগিত থাকায় অভিযোগ গঠনের আট বছরেও শুরু হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ। এদিকে আদালত সূত্র বলছে, ভবন ধসে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় মোট চারটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে হত্যা মামলা করে পুলিশ এবং আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় আরও একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর মধ্যে হত্যা মামলাটির বিচার আটকে আছে সাক্ষ্যগ্রহণের জালে এবং ইমারত আইনের মামলার বিচারে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় অভিযোগ গঠনের নয় বছরেও শুরু হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ। অন্যদিকে, ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন করায় দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা সম্পদের তথ্য গোপনের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এর বাইরে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলমান।আসামিপক্ষ বলছে, দুই মামলায় বিচার শেষ না হওয়ায় বিচারহীনভাবে কারাগারে আটক রয়েছেন ভবন মালিক সোহেন রানা। এই দীর্ঘ সময়ে আহতদের ক্ষত না শুকালেও, নিহতের স্বজনদের হাহাকার না থামলেও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে পুরোপুরি বদলে গেছে দেশের পোশাক শিল্পের চিত্র। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সবুজ কারখানা এখন বাংলাদেশে। তবে যে রানাপ্লাজা ধাক্কায় এই অর্জন, সেই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও আহতদের পুনর্বাসনসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য সরকারকে এগিয়ে আসার দাবি খাতসংশ্লিষ্টদের। সেই সাথে শুধু পোশাক শিল্প নয়, সব খাতেই কর্মপরিবেশ নিরাপদ করার তাগিদ শ্রম অধিকার কমিশনের।এবি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর