রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রথম লাতিন আমেরিকান নেতা পোপ ফ্রান্সিস আর নেই। সোমবার (২১ এপ্রিল) ৮৮ বছর বয়সে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ভ্যাটিকান। সম্প্রতি তিনি মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এদিকে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প স্যোশাল মেডিয়া প্লাটফর্ম ট্রুথ স্যোশালে লিখেছেন, “পোপ ফ্রান্সিস শান্তিতে ঘুমান। ঈশ্বর তার এবং তিনি যাদের ভালবাসতেন সবার মঙ্গল করুন। তবে ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি শোকবার্তা প্রকাশের পর তা মুছে দিয়েছে ইসরায়েল। তাদের পক্ষ থেকে কোনও ব্যাখ্যা প্রদান করা না হলেও দেশটির একটি সংবাদপত্রের দাবি, গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রয়াত পোপের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে এই পদক্ষেপের সম্পর্ক রয়েছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের অফিসিয়াল পেইজ থেকে সোমবার লেখা হয়, আপনার আত্মা শান্তি পাক, পোপ ফ্রান্সিস। তার জীবনাদর্শ আমাদের জন্য এক আশীর্বাদ হয়ে থাকুক।অবশ্য শোকবার্তাটি কিছুক্ষণ পর হাওয়া হয়ে যায়। এ বিষয়ে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বয়ান নিয়েছে দ্য জেরুজালেম পোস্ট। প্রয়াত পোপ একাধিকবার ইসরায়েলবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, শোকবার্তাটি ভুলে প্রকাশ করা হয়েছিল।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওই পেইজটি ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পোপের মৃত্যুতে শোকবার্তা প্রত্যাহার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রয়টার্সের অনুরোধে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়া দেওয়া হয়নি।গত নভেম্বরে ফ্রান্সিস বলেছিলেন, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের সময় কোনও গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে কিনা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তা খতিয়ে দেখা উচিত। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলকে নিয়ে সেবারই প্রথম স্পষ্ট সমালোচনা করেন তিনি।চলতি বছর জানুয়ারিতেও পোপ বলেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতি লজ্জাজনক হয়ে উঠেছে। তার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে রোমের প্রধান র্যাবাই (ইহুদিদের ধর্মযাজক) বলেন, ফ্রান্সিস পক্ষপাতমূলক সমালোচনা করছেন।গাজায় গণহত্যার অভিযোগকে বরাবরই অস্বীকার করে ইসরায়েল দাবি করে আসছে, তাদের অভিযান কেবল হামাসের বিরুদ্ধে, বেসামরিকরা তাদের লক্ষ্যবস্তু নয়।এদিকে, পোপের মহাপ্রয়াণে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে শোক প্রকাশ করেননি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।অবশ্য, বিশ্বের সব খ্রিস্টানের প্রতি এক খোলা চিঠি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ। পোপের মৃত্যুতে খ্রিস্টানদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ফ্রান্সিস ছিলেন গভীর বিশ্বাস এবং অপরিসীম সহমর্মিতাসম্পন্ন একজন মানুষ।উল্লেখ্য, দীর্ঘ কয়েকশ বছর ধরে ক্যাথলিক চার্চের সঙ্গে ইহুদিদের শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।দায়িত্ব পালনের বারো বছরে সাধারণ কোনও সংঘাতে পক্ষ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি যেমন ক্রমবর্ধমান ইহুদি বিদ্বেষ নিয়েও নিন্দা জানিয়েছেন, তেমনি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় অবস্থানরত সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন।এবি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর