খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে খুলনায় পৌঁছান শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল দশটায় শিক্ষা উপদেষ্টা ক্যাম্পাসে পৌঁছালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় শিক্ষা উপদেষ্টা প্রায় আধা ঘণ্টা অনশনরত ও অন্য শিক্ষার্থীদের সামনে বসে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার কথা বলার পরও কোন সমাধান হয়নি। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতি শিগগির কমিটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবে।তিনি বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই, কারণ তা আদালতে টেকে না।’শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা দুইমাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। আমরা এই বিষয়ে আর সময় দিতে চাই না। আমরা লাশ হয়ে গেলেও ভিসির পদত্যাগ ছাড়া অনশন ভাঙব না।’এসময় কীভাবে ছয় দফা থেকে উপাচার্য পদত্যাগের এক দফা দাবি পরিণত হলো, সেই বিষয়টি শিক্ষার্থীরা তাকে জানান। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে পরিস্থিতি এ পর্যায়ে এসে গেছে। ছাত্রদের অনশন করতে হচ্ছে। তারা চাচ্ছে আমরা এখনই কোনো ঘোষণা দেই। যার মাধ্যমে তারা অনশন ভঙ্গ করতে পারে। আমি তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছি আইনি কিছু বিষয় রয়েছে আমরা যাই করি না সেটা আইন দ্বারা নির্দিষ্ট হতে হবে। আমার ধারণা আমি কিছুটা হলেও তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। আমি এখানে একজন পিতা হিসেবে এসেছি আমি তাদেরকে বলেছি যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে তারা যেন পানি পান করে। আর যারা সুস্থ আছে তারা অনশন পালন করুক। কিন্তু তারা সেটা শুনেনি আমি তারপরও তাদেরকে অনুরোধ করছি তারা যেন অনশন ভাঙে আমি আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব তাদের এই সমস্যা সমাধান হবে।কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানালে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এসেছি শুধুমাত্র ছাত্রদের অনশন ভাঙাতে, অন্য কারো সঙ্গে এখন কোনো কথা নয়’। আলোচনার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাস ছাড়েন শিক্ষা উপদেষ্টা।এর আগে, বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত কুয়েট ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে ইতিমধ্যে ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।বৈশাখের তীব্র গরমে অনশনে আন্দোলনরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। অনেকের শরীরে রক্তচাপ কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। কুয়েটের আবাসিক হল ও বাইরের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে সামনে জড়ো হচ্ছেন।সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার চত্বরে তারা এ অনশনে বসেন। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রোকেয়া হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন ছাত্রীরা। এ সময় ছাত্র হলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের তালা ভাঙতে সহায়তা করেন।অপরদিকে কুয়েটের চলমান আন্দোলনের বিষয়টি বর্তমানে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ (২৩ এপ্রিল) ক্লাস বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টায় ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। এ সময় বুয়েট, জবি, চুয়েট, কুয়েট, ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খুলনা নাগরিক সংগঠন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন। মঙ্গলবার নিজেদের ফেসবুকে পেজে তারা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।এবি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর