চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ইতিহাসে একটি মাইলফলক যোগ হলো বুধবার (১৭ এপ্রিল)। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র সাড়ে ৫ মাসের মাথায় চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নগরবাসীর জন্য আনতে সক্ষম হয়েছেন ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব। এই অর্থ দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক), যা দীর্ঘদিনের পাওনা হলেও এতদিন তা আদায়ে ব্যর্থ ছিলেন আগের মেয়ররা।চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে চসিকের প্রাপ্য নির্ধারিত পৌরকর হচ্ছে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা। ২০১৭ সালে নির্ধারিত এ পৌরকরের বিপরীতে চবক প্রতি বছর পরিশোধ করত মাত্র ৪৫ কোটি টাকা, যার ফলে চসিক প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১১৫ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছিল। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর থেকে আজ অবধি বন্দর কর্তৃপক্ষ কখনোই চসিকের প্রস্তাবিত কর পূর্ণভাবে পরিশোধ করেনি।তবে বর্তমান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি প্রদান করা হয় পৌরকর বাবদ বকেয়া পরিশোধের অনুরোধে। প্রত্যুত্তর না পেয়ে বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নজরে আনেন তিনি।এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নজরুল ইসলাম আজাদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, “চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবমতে পৌরকর বাবদ চাওয়া ১১৫ কোটি টাকার মধ্যে জয়েন্ট সার্ভে কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী কম-বেশি সমন্বয়ের শর্তে আপাতত ১০০ কোটি টাকা চসিককে প্রদান করা যেতে পারে।”এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মুনিরুজ্জামান চসিক মেয়রের কাছে ১০০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেন। এ সময় বন্দরের পক্ষে সদস্য (হার্বার ও মেরিন) আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ, সচিব মো. ওমর ফারুক এবং চসিকের পক্ষে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চেক গ্রহণের পর গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বর্তমানে নগরবাসীর মৌলিক অধিকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে প্রতি বছর প্রায় ৭০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে চসিক। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এই ধরনের সেবা সচল রাখতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। বন্দর থেকে পৌরকর আদায়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে তদবির করি। আজ সেই চেষ্টারই সুফল মিলেছে।”তিনি আরও বলেন, “এই অর্থ চট্টগ্রাম নগরের যোগাযোগ অবকাঠামো, নাগরিক সেবা এবং অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি আনবে। আমরা বন্দরকেন্দ্রিক ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দ্রুত সংস্কারে পদক্ষেপ নিচ্ছি।”বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মুনিরুজ্জামানও এই সহযোগিতার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বন্দরের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে চসিকের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তার অনুরোধে মেয়র চসিকের প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমানকে বন্দরকেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন।চট্টগ্রাম মহানগরীর রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই ‘চমকপ্রদ’ সাফল্য নগর উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট মহল। অতীতের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে এই অর্জন নগরের আর্থিক কাঠামোকে সুসংহত করবে—এমনটাই প্রত্যাশা করছে নগরবাসী।
Source: সময়ের কন্ঠস্বর