রাজশাহীর বাঘা উপজেলাযর পীরগাছা গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৫০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছরই এই মেলায় ভিড় জমান হাজারো মানুষ।স্থানীয়দের উদ্যোগে, নওটিকা ও পীরগাছা গ্রামের বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির আয়োজনে এই মেলাটি অনুষ্ঠত হয়। শুধু বিনোদনেরই নয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকে।এই মেলায় পাওয়া যায় হরেক রকম মাটির তৈরি খেলনা, বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রীসহ লাঠি খেলা, জারি-সারি গান।স্থানীয় বয়স্ক এক বাসিন্দা জানান, এই মেলার মাধ্যমে তারা ফিরে পান হারিয়ে যাওয়া শিকড়ের টান। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসা এই মেলা এলাকায় উৎসবের আমেজ এনে দেয়।এই বৈশাখী মেলাকে ঘিরে পীরছাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল আনন্দ র্যালী, পান্তা পরিবেশন, বাচ্চাদের খেলাধুলা, বিকালে লাঠিখেলা, আলোচনা অনুষ্ঠান সন্ধার পরে নাটরের চলন নাটুয়া নাট্টগষ্টী অভিনীত নাটক নবাবের দরবারে কপিলা অনুষ্ঠতি হবে।মেলায় নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা, থাকছে পর্যাপ্ত পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের তদারকি। এই মেলাকে ঘিরে শুধু পীরগাছাই নয়, আশেপাশের এলাকার মানুষও প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকেন এই উৎসবের।এই অনুষ্ঠানের আনন্দ র্যলিতে উপস্থিত ছিলেন মেলা কমিটির সভাপতি প্রভাষক সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তোহাজ্জত হোসেন, অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক নুরুজ্জামান সরকার, শিক্ষক এজাহুরুল হক, প্রভাষক নবাব আলী, সাবেক মেম্বার চাঁন মিয়া, মেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ মুনসুর আলী, সহকারী কোষাধ্যক্ষ নাসির, সাইদুল ইসলাম কপিল, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষীকা ঝরনা খাতুন, শিক্ষক মহিরুল, সালাউদ্দিন, আতিকুর রহমান আতিক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ছাত্র, যুবসমাজসহ সুশীল লোকজন।বৈশাখী মেলাকে ঘিরে প্রভাষক নাবাব বলেন, আমি আমার বাব দাদার মুখে এই মেলার গল্প শুনে এসেছি। এই মেলার বয়স নাকি প্রায় ১৫০ বছরেরো অধিক। এই মেলাটা আমরা দল, মত নিবিশেষে একত্রিত হয়ে উদযাপন করে থাকি। আমাদের বাপ দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নতুন প্রজন্মের কাছে জীবন্ত চিত্র তুলে ধরতে এই মেলার মূল উদ্দেশ্য।অবশর প্রাপ্ত শিক্ষক নূরুজ্জামান বলেন, এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের শৈশবের স্মৃতি, পরিবার-পরিজনের মিলনমেলা, আর হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সংস্কৃতির এক বিশাল অংশ। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে এই মেলা গ্রামীণ জীবনের এক জীবন্ত চিত্র তুলে ধরে।মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোহাজ্জত হোসেন বলেন, আমাদের এই বৈশাখী মেলা শুধু বিনোদনের নয়, এটা পীরগাছার শতবর্ষী ঐতিহ্য। প্রায় ১৫০ বছর ধরে আমরা এই মেলার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আসছি। এটা আমাদের সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে নতুন প্রজন্ম গ্রামীণ ঐতিহ্য ও লোকজ সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারে।মেলা কমিটির সভাপতি প্রভাষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি সবার জন্য নিরাপদ ও আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করতে। প্রশাসনের সহযোগিতায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমরা সবাই মিলে এই মেলাকে আরও সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও উপভোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেছি।
Source: সময়ের কন্ঠস্বর