শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ফসল ও ঘরবাড়ির পাশে দেওয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে গত শুক্রবার রাতে একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়। শনিবার উদ্ধার ও ময়নাতদন্ত শেষে সেখানেই হাতিটি মাটিচাপা দেওয়া হয়। হাতির এ মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায়ই সীমান্ত সড়কের আশপাশে ও লোকালয়ে হাতির দল বিচরণ করছে। এ পরিস্থিতিতে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে এলাকার মানুষের মাঝে সচেতনতা আরও জোরদার করার পাশাপাশি মাইকিং শুরু করেছে বন বিভাগ।জানা গেছে, ছয় মাসের অধিক সময় ধরে ৪৫ থেকে ৫০টি বন্য হাতি কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে নালিতাবাড়ীর সমশ্চুড়া থেকে ঝিনাইগাতীর গজনী পাহাড় এলাকায় অবস্থান করছে। দিনের বেলায় গহিন পাহাড়ে অবস্থান করে তারা। সন্ধ্যা হলেই খাবারের খোঁজে নেমে আসে লোকালয়ে। এমনকি দিনের বেলায়ও সীমান্ত সড়কে দেখা যাচ্ছে। ফসল রক্ষার জেরে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গারো পাহাড়ে গত ৬ মাসে ৫টি হাতি ও ৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে।স্থানীয়রা জানান, বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল ও ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিয়ে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করেন। এতে হাতির দল আলো দেখে ভয়ে লোকালয় ও ফসলি মাঠে প্রবেশ এড়িয়ে চলে। গত শুক্রবার রাতে নাকুগাঁও সীমান্ত হয়ে উত্তর কাটাবাড়ি এলাকায় ৮-১০টি হাতির একটি দল ঢুকে। পরে রাতের কোন এক সময় হাতির দলের সামনে পেতে রাখা বিদ্যুতের জিআই জড়িয়ে একটি বন্য হাতি ঘটনাস্থলে মারা যায়। শনিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে হাতিটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়।এ ঘটনায় শনিবার দুইজনের বিরুদ্ধে বন্য হাতি হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা করেন বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী।স্থানীয় কয়েকজনের ভাষ্য, বন্য হাতির মৃত্যুর পর এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় যাচ্ছেন না কেউ।কয়েকজন কৃষক জানান, কয়েকদিন আগে বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। বন্য হাতিগুলো এখন আর মাঠে ধান খেতে পাচ্ছে না। তাই এখন তারা প্রায় রাতেই ঘরবাড়িতে হামলা করছে। সেইসঙ্গে ঘরের মজুত রাখা ধান-চাল খেয়ে সাবাড় করছে।পরিবেশবাদীরা বলছেন, শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা বনাঞ্চল এলাকা। সেখানকার লোকজন ধীরে ধীরে চলে গেছে বন্য হাতির আবাসস্থলে। যেখানে হাতির থাকার কথা সেখানে এখন মানুষ রাজত্ব করছে। এ জন্য হাতি আর মানুষের দ্বন্দ্ব এখন প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।শেরপুরের পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীণ ভয়েসের সভাপতি রফিক মজিদ বলেন, হাতির অভয়ারণ্য এলাকায় মানুষজন বনের ভিতরে বাড়ি-ঘর তৈরি করছে। বনের গাছপালা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে জঙ্গল পরিষ্কার করে জবরদখল করে মৌসুমভিত্তিক ফলমূল ও সবজি আবাদ করছে। এতে বন্য হাতির আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে আসছে। এ কারণে ক্ষুদ্ধ হাতির দল লোকালয়ে এসে বারবার মানুষের বাড়ি-ঘরে হানা দিচ্ছে। স্থানীয়রাও তাদের বাড়ি-ঘর ও ফসল রক্ষা করতে হাতির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন। বন্য হাতি শেরপুর থেকেও বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জীববৈচিত্র রক্ষায়, পরিবেশ রক্ষায় ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় হাতির রক্ষা একান্ত জরুরী বলে দাবি তার।এ বিষয়ে বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী বলেন, হাতির দলটি পাহাড়ি এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। হাতির মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হাতিগুলোকে কেউ যাতে বিরক্ত না করে, সে বিষয়ে আমরা স্থানীয়দের সচেতন করতে মাইকিং করে যাচ্ছি।পিএম
Source: সময়ের কন্ঠস্বর