মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার প্রাণকেন্দ্র সিরাজদিখান বাজারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্থাপিত একটি সরকারি গভীর নলকূপ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নলকূপে এখন আর জল পড়ে না। উপরন্তু, নলকূপের চারপাশ ঘিরে ময়লা আবর্জনার স্তূপের চিত্র দেখা যায়। বাজারের গণশৌচাগারের পাশে স্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ পানি সরবরাহের উৎস পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। বুধবার (১৮ মে) দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নলকূপটির চারপাশে ছড়িয়ে আছে পচা-বাসি খাবার, প্লাস্টিক, পলিথিন ও নানা ধরনের বর্জ্য। দুর্গন্ধে পাশে দাঁড়ানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য নির্মিত এই অবকাঠামো আজ যেন অবহেলার চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিরাজদিখান বাজার বণিক সমিতির নামে সরকারিভাবে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। এই নলকূপ স্থাপনের জন্য সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ হাজার ২০০ টাকা জমা দিতে হয়। স্থাপনের কয়েক মাসের মধ্যেই নলকূপের চারপাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে এটি বাগানে পরিণত হয়। এরপর থেকে নলকূপটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, যা থেকে আগে প্রায় ১০ হাজার মানুষ সুপেয় পানি পান করতো।সবজি বিক্রেতা ইউসুফ শেখ বলেন, ‘সকালে সবজি বিক্রির জন্য বাজারে আসার পর পিপাসা পেলে পানি খাওয়ার মতো কোনো জায়গা পাই না। নলকূপটি এতটাই নোংরা হয়ে গেছে যে, বাধ্য হয়ে দোকান থেকে বোতলের পানি কিনে খেতে হয়। আগে এখান থেকেই ফ্রি পানি খেতাম।’ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক মাহবুব রহমান বলেন, ‘যাত্রীরা বাজারে নামলেই পানি খুঁজে। কিন্তু নলকূপের এই অবস্থা দেখে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ পথচারী কামাল হোসেন বলেন, ‘এমন জায়গায় নলকূপ রেখে কোনো লাভ নেই, যেখানে গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।’রশুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সিরাজদিখান বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা ও পথচারীদের জন্য সরকারিভাবে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই এর চারপাশে ময়লা জমে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি বাজার কমিটিকে জানাব যেন কেউ এখানে ময়লা না ফেলে এবং পানি ব্যবহারের উপযোগী থাকে।’সিরাজদিখান বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘গণশৌচাগারের পাশে সরকারিভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করানো হয়েছিল জনসাধারণের পানির চাহিদা পূরণের জন্য। কিন্তু কিছু অসচেতন ব্যক্তি রাতের আঁধারে এখানে ময়লা ফেলে নলকূপের চারপাশকে নোংরা করে ফেলেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। দ্রুত বাজারে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে এখানে যে আর কেউ ময়লা না ফেলে। পাশাপাশি নলকূপটি সচল রেখে সবাই যাতে পানি খেতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের সুবিধার্থে এই নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু ময়লার কারণে এটি এখন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমি বাজার বণিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। এছাড়া যদি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি থাকে, আমাদের অফিস থেকে তা মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।’এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর