চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র তাণ্ডবে আটকে পড়া দুটি জাহাজ দেখতে এখন প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন বহু দর্শনার্থী।চলতি বছরের ২৯ মে রাতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র প্রভাবে সাগরে প্রবল জোয়ার ও দমকা হাওয়ার কারণে কয়লা বোঝাই নাভিমার-৩ কার্গো ও মারমেইড-৩ লাইটার নামের দুটি জাহাজ উপকূলের কাছাকাছি এসে আটকে যায়। এরপর থেকেই জাহাজ দুটি কূলের অদূরে স্থির হয়ে পড়ে আছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে জাহাজ দেখতে আসছেন। কেউ মোবাইলে ছবি তুলছেন, আবার কেউ জাহাজের কাছে গিয়ে উপভোগ করছেন। জাহাজের পটভূমিতে ছবি তুলে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন।তবে আনোয়ারাসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের জাহাজ দেখার দৃশ্য নতুন নয়। এর আগে, ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ক্রিস্টাল গোল্ড নামের জাহাজটি বহির্নোঙর থেকে পারকি সৈকতে উঠে আটকা পড়ে। সেদিন প্রবল বাতাসের তোড়ে জাহাজটি চরে আটকে যায়।চট্টগ্রাম শহর থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আকিবুর রহমান বলেন, ‘এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। এত বড় জাহাজ এত কাছে থেকে দেখছি, এটা জীবনের এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।’আরেক দর্শনার্থী কলেজ শিক্ষার্থী তাইছির জুবাইর বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে আটকে পড়লেও জাহাজ দুটি এখন দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। তবে এমন দৃশ্য আমাদের জন্য নতুন নয়। ক্লাস ফাইভে থাকাকালেও ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজটি পারকিতে আটকে পড়েছিল।’তবে স্থানীয়রা এতটা আনন্দে নেই। তাঁরা জানিয়েছেন, জাহাজ দুটি দীর্ঘদিন এভাবে আটকে থাকায় বেড়িবাঁধে ধাক্কা লেগে ক্ষয় দেখা দিয়েছে। সামান্য জোয়ারেই বাঁধের পাড় ভেঙে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বেড়িবাঁধ লাগোয়া মসজিদটি।স্থানীয় বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার কারণে জাহাজ থেকে পানি ধাক্কা খেয়ে বাঁধের পাড়ে ভাঙন ধরেছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে বড় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’এদিকে, জাহাজ দুটি উদ্ধারে এখনো বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে উদ্ধারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে, জাহাজ দুটি কতদিন এভাবেই থাকবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস, ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে সাগরে থাকা এই দুটি জাহাজ প্রবল স্রোতে দিক হারিয়ে উপকূলে চলে আসে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর