মুসলিম দেশগুলোর রয়েছে ইসরায়েলের তুলনায় ৬৪৪ গুণ বেশি জমি। তাই তারা চাইলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য কিছু জমি দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কিত এ মন্তব্য করেন তিনি। খবর বিবিসিমাইক হাকাবি বলেন, ‘যদি সত্যিই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রবল ইচ্ছা থাকে, তবে এমন কারও (মুসলিম দেশ) থাকা দরকার, যে বলবে, ‘আমরা সেটা (ফিলিস্তিন রাষ্ট্র) আমাদের এখানে রাখতে চাই, বলেন মাইক হাকাবি।হাকাবির এই মন্তব্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, দুই রাষ্ট্র সমাধান একটি ‘আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য’ মাত্র। তবে বাস্তবতা হলো এই মুহূর্তে ফিলিস্তিন সমাজে ‘ইহুদি হত্যার সংস্কৃতি’ প্রচলিত আছে, যা আগে পরিবর্তন করতে হবে।এর আগেও হাকাবি ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণার পক্ষে কথা বলেছেন এবং পশ্চিম তীরকে ‘জুডিয়া ও সামারিয়া’ নামে অভিহিত করে আসছেন যা ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।সাক্ষাৎকারে হাকাবি তীব্র সমালোচনা করেন যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের ওপর, যারা সম্প্রতি ইসরায়েলের দুই কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক বিবৃতিতে বলেন, এই দুই মন্ত্রী ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন।’হাকাবি একে ‘চমকপ্রদ’ সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ শুনিনি কেন এই দুই নির্বাচিত মন্ত্রীকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।’এ মাসের শেষদিকে জাতিসংঘে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হবে। হাকাবি এই উদ্যোগকে ‘ভুল সময় এবং ভুল পন্থা’ বলে অভিহিত করেছেন।তিনি বলেন, ‘এটি এমন একটি সময় যখন যুদ্ধ চলছে, এ সময়ে বাইরের চাপ দিয়ে রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া চাপিয়ে দেয়া নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার পরিপন্থী।’হাকাবির বক্তব্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক অবস্থানের সঙ্গে স্পষ্ট ফারাক লক্ষ্য করা যায়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস পরবর্তীতে বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত তার নিজস্ব মতামত দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ করেন প্রেসিডেন্ট।’২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আকস্মিক হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এরপর থেকে ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৯০০’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, নিহতদের অন্তত এক চতুর্থাংশ শিশু।বিশ্লেষকদের মতে, হাকাবির মন্তব্য কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কোণঠাসা করতে পারে, বিশেষ করে যখন বিশ্ব সম্প্রদায় একটি টেকসই শান্তি প্রক্রিয়ার খোঁজে রয়েছে।এবি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর