হতে পারে এটাই জীবনের শেষ ঈদ, শেষ দিন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। আশেপাশের বেশিরভাগ রোগীই এরই মধ্যে মারা গেছেন, বাকিরা মৃত্যুর অপেক্ষায়।৫২ বছর বয়সী নূর আলম সিদ্দিক, পেশায় স্কুল শিক্ষক। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়া বাবাকে আইসিইউতে রেখে অপেক্ষা করছেন একটু প্রশান্তির। আজ ঈদের আনন্দ সবার জন্য হলেও তাদের ঈদ আনন্দ আটকে রয়েছে এই হাসপাতালের বারান্দায়।অপেক্ষমান নূর আলম সিদ্দিক (৫২) বলেন, ‘আমার বাবা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন, স্ট্রোক করেছেন। আমার বাড়ি নওগাঁ পত্নিতলা থানা এলাকায়। পরিবার গ্রামের বাসায় ঈদ করছে। বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু যেতে পারছিনা। আমার দুই ছেলে আছে কিন্তু আমার তো এখানে বাবা আছে। আমি তো আমার বাবাকে এখানে রেখে ঈদ করতে যেতে পারছিনা।’একই ইউনিটে ভর্তি রোগীর স্বজন আকলিমা বেগম (৫৫) বলেন, ‘বোন তিন বার স্ট্রোক করেছে। তার মধ্যে একবার পড়ে গেছিলো, তারপর আবার মাথায় সেলাই করেছে। এসবের জন্যই এই হাসপাতালেই আছি।’এরকম আরও শতাধিক মানুষের ঈদ কাটছে এভাবেই। সমস্ত আনন্দ উৎসব ভুলে চেষ্টা কেবল প্রিয় মানুষদের পাশে থাকার। এরকম রোগী ফিরে পাওয়ার আশায় কাটছে স্বজনদের ঈদ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক রোগীর স্বজন জানান, ‘বাবার সাথে এবারের ঈদ হাসি আনন্দে কাটানোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু গতকাল বাবা আকস্মিক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় আইসিইউতে এডমিট করতে হয়েছে। এভাবেই কাটছে এবারের ঈদ।’এ মানুষগুলোর পাশে যারা থেকে গেছেন তারা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। সবচেয়ে সংকটময় পরিবেশে রোগীর পাশে থাকাটাই যেন তাদেরও ঈদ আনন্দ।অনন্তকালের যাত্রার অপেক্ষায় যারা, তাদের পাশে থাকা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যই কবি লিখেছেন, ‘মৃত্যু আয়, তিন পাত্তি খেলি আয়। মৃত্যু সত্য, মৃত্যু বাস্তব।’ এই সুনির্দিষ্ট মৃত্যু পথযাত্রীদের পাশে থেকেই নিজেদের ঈদ আনন্দ খুঁজে পান রোগীর স্বজনরা। এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর