ভূঞাপুর-টাঙ্গাইল পথে যাত্রীদের কাছ থেকে চরম হারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৫ পরিবহনকে জরিমানা করা হয়। শুক্রবার (৬ জুন) সকালে সরেজমিনে উপজেলার ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। ভাড়া না মিটিয়ে গাড়িতে ওঠায় ৪০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা দিতে হয় যাত্রীদের। এ সময় অধিকাংশ যাত্রীই অযৌক্তিক ভাড়ার অভিযোগ করে।সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিকাল ৪:৩০ মিনিট থেকে ৫:৩০ পর্যন্ত ভূঞাপুর বাস টার্মিনালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৩টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা, একটি ট্রাক এবং একটি বাস চালককে সর্বমোট ৪,৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু আবদুল্লাহ খান। এ সময় পুলিশ এবং সেনাবাহিনী যৌথভাবে সহযোগিতা করেন।জানা যায়, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে ঘরে ফেরা মানুষদের বিরম্বনার আরেক নাম গণপরিবহন। প্রতিবছর এই ঈদের সময়ই গণপরিবহনগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে এক প্রকার জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। বাস এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকরা তাদের সমিতির নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে যাত্রীদের থেকে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর পর্যন্ত সিএনজি চালিত অটোরিকশায় সাধারণত ৪০ টাকা ভাড়া এবং টাঙ্গাইল থেকে ৬০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। সেখানে সিএনজি চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করে ৪০ টাকার ভাড়া ১২০ টাকা এবং ৬০ টাকার ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করছেন।বারবার তাদের সতর্ক করা সত্ত্বেও তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করছেন না। এর আগে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাতেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।মাসুদ নামের একজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, টাঙ্গাইল থেকে ভূঞাপুর ৬০ টাকা ভাড়া, সেই একই রাস্তায় ভাড়া গুনতে হয় ১৫০ টাকা। এটা মেনে নেয়া যায় না। এর কম দিলে তারা গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। বাধ্য হয়েই আমরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই আসি। অতি জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাই।হাফিজুর রহমান নামের একজন রাজমিস্ত্রী সিএনজিতে এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর এসে সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ৪০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা দিতে হয়। এ যেন মগের মুল্লুক। কিছু বললে তারা চড়াও হয় যাত্রীদের উপর। আমরা যাত্রীরা নিরুপায় হয়েই আসছি। এই নৈরাজ্য দেখার কেউ নেই।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ডে সিএনজির সিরিয়াল মাস্টার বলেন, ৪০ টাকার ভাড়া ঈদ উপলক্ষে ৫০ টাকা নিতে পারে কিন্তু ৮০ টাকা বা ১০০ টাকা নিতে পারে না। এটা অবৈধ, যাত্রীদের এভাবে জিম্মি করা ঠিক না। এদের আইনের আওতায় আনা দরকার।এ বিষয়ে চালকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে আরেক বিরম্বনায় পরতে হয়। এ বিষয়ে চালকরা কথা বলতে রাজি হয় না। প্রশ্ন করতেই তারা গাড়ি নিয়ে লাপাত্তা। তবে একজন চালক জানিয়েছেন, জ্বালানি নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে থাকতে হয়। অপরদিকে রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এবং যানজটের কারণে অনেক রাস্তা ঘুরে আসতে হয়। তাই কিছু টাকা বাড়তি নিচ্ছি।এ বিষয়ে সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমিক সমিতির সভাপতি খন্দকার জুলহাস বলেন, শ্রমিকরা সমিতির নির্দেশ অমান্য করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সেটা সমিতি দায় নেবে না। সমিতি তাদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে নিষেধ করার পরও কেন তারা এহেন কাজ করে, তাদের বিষয়ে সমিতি কোনো দায় নেবে না। তাদের দায়িত্ব তারাই নেবে, আমরা নেব না।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে অভিযুক্তদের অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। এর পরও এহেন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর