মাত্র দুটি সিগারেট ও পাঁচশো টাকার বাকির জেরে প্রাণ হারালেন এক তরুণ। স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে পরিবারের হাল ধরবেন, কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন। ছেলে হারিয়ে নির্বাক বাবা।মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের মাহিম সরকার (২১) নামের এক মুদি দোকানদারকে ছুরিকাঘাতে হত্যার প্রতিবাদে ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।রোববার (০১ জুন) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রায় ৫০০ নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা বৃষ্টির মধ্যেও দাঁড়িয়ে হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি জানান।নিহতের বাবা সবুজ সরকার কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘আমার একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারালাম। স্বপ্ন ছিল বিদেশে পাঠিয়ে সংসারটা গুছিয়ে নেবো। এখন সেই স্বপ্নটা শুধু কবরেই রয়ে গেল।’মানববন্ধনে মাহিমের মামা মনির হোসেন দেওয়ান বলেন, ‘ঘাতক নাঈম একজন চিহ্নিত মাদকাসক্ত ও উচ্ছৃঙ্খল যুবক। প্রায়ই মাহিমকে হয়রানি করতো। আমার ভাগ্নেকে রাত ২টায় ডেকে সিগারেট নেয়, টাকা না থাকায় বকাঝকা করে, পরে চাকু দিয়ে কুপিয়ে দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও ফাঁসি চাই।’স্থানীয় ইউপি সদস্য রকিবুল হাসান রকি, নিহত মাহিমের মা মরিয়ম বেগম, মামা রশিদ দেওয়ান, ছোট ভাই জিসান সরকারসহ নারী-পুরুষেরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। তারা বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড শুধু এক তরুণকে নয়, একটি পরিবারকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। এমন অপরাধের বিচার না হলে সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। তাই ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম জানান, মাহিমকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অভিযুক্ত নাঈমকে পরদিনই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহতের বাবা সবুজ সরকার বাদী হয়ে দুটি আসামিকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাচেষ্টা মামলা হলেও, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। তিনি আরও বলেন, ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।উল্লেখ্য, নিহত মাহিম স্থানীয়ভাবে একটি মুদি দোকান চালাতেন। গত ২৭ মে দিবাগত রাতে প্রতিবেশী নাঈম শিকদার দোকানে গিয়ে দুটি সিগারেট নেয় এবং পাঁচশো টাকার একটি নোট দেয়। দোকানে ভাংতি না থাকায় টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরদিন (২৮ মে) দুপুরে ফোনে মাহিমকে গালিগালাজ করে এবং তার বাবাকে নিয়ে বাড়িতে যেতে বলে নাঈম। পরে বিকেলে বাবা-পুত্র একসঙ্গে যাওয়ার পথে রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকা নাঈম তাদের ওপর হামলা চালায়। ছুরি দিয়ে মাহিমের বুকের ডান পাশে আঘাত করে পালিয়ে যায় সে। গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুইদিন পর মাহিম মৃত্যুবরণ করেন।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর