ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি মৌসুমে কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী বিজয়নগর, কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় পাহাড়ি টিলা ভূমি সমৃদ্ধ লাল মাটি হওয়ায় এই অঞ্চলে বেশি কাঁঠালের ফলন হয়েছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৮৫৯ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। এ বছর জেলায় প্রায় ১৬ কোটি ২০ লাখ ৪৮ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা হবে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায়, পাশাপাশি কৃষকেরা সঠিকভাবে বাগানের পরিচর্চা করায় এই বছর কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেয়ে খুশি বাগান মালিকেরা, অন্যদিকে দাম হাতের নাগালে থাকায় স্বস্থিতে ক্রেতারা।জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী লাল পাহাড়ি মাটিতে কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। মধু মাসে জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, ছতুরপুর, পাহাড়পুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, মেরাসানি, আউলিয়া বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল ও কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর, বায়েক, মন্দবাগ, কায়েমপুর এবং আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, আমোদাবাদ, রাজাপুর ও আদমপুর এলাকার প্রতিটি জনপদসহ বাগানগুলোতে ঝুলে আছে ছোট-বড় কাঁঠাল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি, রোগ বালাই থেকে মুক্ত হওয়ায় পরিপক্ক অবস্থায় বাগান থেকে কাঁঠাল বাজারজাত করা হচ্ছে।কৃষকেরা জানান, রসালো ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল মিষ্টি হওয়ায় বাজারে পাহাড়ি টিলাভূমির কাঁঠালের বেশ চাহিদা রয়েছে। বাগান থেকে পাইকারেরা প্রতি এক’শ পিস কাঁঠাল সাইজ অনুযায়ী বিভিন্ন দামে বাগান থেকে কিনে নিচ্ছেন। এতে বেশ লাভবান হচ্ছেন বাগান মালিকেরা। এসব বাগান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলা, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জের ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল কিনে বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যায়।বিজয়নগরের বাগান মালিক আবুল হাসান বলেন, ‘কাঁঠাল আমাদের এলাকায় এবার ভালো হয়েছে। প্রতি দিনই ১’শ থেকে ২’শ কাঁঠাল কাটা হয়। প্রতি এক’শ কাঁঠাল সাইজ অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিনই কাঁঠাল নিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা আসেন। তারা এসব কাঁঠাল বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। এ বছর কাঁঠালের ফলন ভালো হওয়ার আমরা লাভবান হবো বলে আশা করছি। তাছাড়া বিজয়নগর এলাকা মাটির গুণাগুণ ভালো হওয়ায় কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে।’ মো. ফারুক নামে অপর এক বাগান মালিক বলেন, ‘আমরা আগেই কাঁঠাল বাগান কিনে রেখেছিলাম। প্রতি এক’শ কাঁঠাল ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দরে কিনে ছিলাম। এখন কাঁঠাল পরিপক্ক হওয়ার পাইকাররা বিভিন্ন জায়গা থেকে বাগানে আসছে। পাইকারদের কাছে এক’শ কাঁঠাল বিক্রি করছি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দরে। যদি এই দাম আগামী তিন মাস থাকে তাহলে আমরা ভালো লাভবান হবো।’ এদিকে কাঁঠালের ক্রেতারা জানান, ‘সীমান্তবর্তী পাহাড়ি লাল মাটিতে কাঁঠালের জুড়ি নেই। দামও হাতের নাগালে রয়েছে।’ অন্যদিকে বিক্রেতারা জানান, ‘চাহিদা থাকায় বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভালো।’ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের আনন্দ বাজারের কাঁঠাল বিক্রেতা আব্দুল করিম বলেন, ‘আমি এখানে বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, ছতুরপুর, পাহাড়পুর, মেরাশানি, আউলিয়া বাজার এলাকা থেকে কাঁঠাল নিয়ে এখানে আসি। বাজারে প্রতিদিন আড়াই’শ থেকে ৩’শ কাঁঠাল বিক্রি করি। এখানকার মানুষ অন্য এলাকার চেয়ে বিজয়নগরের কাঁঠাল বেশি পছন্দ করে। এখানে কাঁঠালের সাইজ দেখে দাম করা হয়। কাঁঠাল বিক্রি করে আমরাও লাভবান।’ বাজারে কাঁঠাল কিনতে আসা বিকাশ বনিক বলেন, ‘অন্যান্য এলাকা থেকে আমাদের বিজয়নগরের কাঁঠাল সবারই পছন্দের। এই সব এলাকার কাঁঠাল মানুষ কিনে বেশি। আমিও এসেছি কাঁঠাল কিনতে। দামও মোটামুটি হাতের নাগালে বলা যায়।’লোকমান মিয়া নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘আমাদের পূর্বাঞ্চলের মাটির গুণাগুণ ভালো হওয়ার এই অঞ্চলের কাঁঠাল খুব মিষ্টি হয়। সেজন্য আমরা এই এলাকার কাঁঠাল বেশি পছন্দ করি। বাজারে কাঁঠালের দামও ভালো, সেজন্য কিনতে আসলাম।’এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘মাটির গুণাগুণ ভালো হওয়ায় চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৮৫৯ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ করা হয়েছে। এ বছর জেলায় প্রায় ১৬ কোটি ২০ লাখ ৪৮ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা হবে। জেলার বিজয়নগর, কসবা ও আখাউড়া উপজেলা পাহাড়ি টিলাভূমি সমৃদ্ধ লাল মাটি (অম্লীয় মাটি) হওয়ায় সেখানে কাঁঠাল বেশি ভালো হয়। সেজন্য আমাদের এই অঞ্চলে কাঁঠালের আবাদ প্রতি বছরই বাড়ছে।’ এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর