যান্ত্রিকতার এই যুগেও সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের অন্যতম প্রধান বাহন হয়ে উঠেছে ঘোড়ার গাড়ি। ধু-ধু বালুর চর পাড়ি দিয়ে দুর্গম এলাকাগুলোর মানুষের জীবনযাত্রার অন্যতম সঙ্গী এখন এই ঐতিহ্যবাহী বাহন।জানা যায়, কৃষিনির্ভর চৌহালী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মানুষদের জমির ফসল বাজারজাত কিংবা সংরক্ষণ করতে নিতে হয় চরাঞ্চল থেকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের হাট-বাজারে। শুষ্ক মৌসুমে বালু বা হাঁটু পানির পথে এসব পণ্য পরিবহনে করতে হয় ঘোড়ার গাড়িতে। আর বর্ষায় যাতায়াতের মাধ্যম নৌকা।বর্তমানে যমুনা নদীতে অসংখ্য ছোট বড় চর জেগে ওঠায় নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে চরাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেল ও ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চরাঞ্চলে এখন অনেকেই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ঘুশুরিয়া,পয়লা, হাটাইল, হিজুলিয়া ও কাঁঠালিয়া চরে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন মো. ছবুর আলী, আলামিন, ইউসুফ ও ইয়াসিন আলীসহ আরও অনেকেই।মো. ছবুর আলী প্রায় ২৫ বছর ধরে ঘোড়ার গাড়ি চালান। বর্তমানে তার দু’টি ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। একটি সে নিজে এবং অন্যটি তার ছেলে মো. আলামিন চালিয়ে দৈনিক ৮’শ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করেন। অপরদিকে ঘোড়ার খাবারের জন্য প্রতিদিন ব্যয় করতে হয় ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। বাকি টাকায় চলে সংসার।ছবুর আলী ও তার ছেলে আলামিন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে চরাঞ্চলে উৎপাদিত সব ফসল ঘোড়াতে পরিবহন করতে হয়। আগে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ঘুশুরিয়া চরে দু একটা গাড়ি ছিল। আর এখন ৮০-৯০টা ঘোড়ার গাড়ি হয়েছে। দিন দিন ঘোড়ার গাড়ির চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া একই চরে ভাড়ায়চালিত মটরসাইকেল চালক মো. সাদ্দাম হোসেন জানান, চরাঞ্চলে যাতায়াতে এখন ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেলের চাহিদাও বাড়ছে। বালু চর হওয়ায় যাতায়াতে একটু বেশি সময় লাগে তারপরও সারাদিন মোটামুটি তেল খরচ বাদে ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা আয় হয়।এ প্রসঙ্গে চৌহালী উপজেলার ৪নং উমারপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীতে চর জেগে ওঠায় নৌ চলাচল বন্ধ। এ কারণে চরাঞ্চলে যাতায়াতের সুবিধার্থে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ও পণ্য পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার বেড়ে গেছে। অনেকেই কৃষি ও মৎস্য শিকাড়ের পেশা ছেড়ে দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি ও মোটরসাইকেল কিনে ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে প্রশাসন দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ করছে। জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসন দুর্গম চরাঞ্চলে সরকারি প্রকল্প পরিদর্শনেও ঘোড়ার গাড়ি ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে থাকেন।এসকে/আরআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর