রাজশাহী সদর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে গত এক দশক ধরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই খামারটি দেশের মৎস্য খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় চলা অনিয়মের ফলে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন খামার ব্যবস্থাপক মোঃ ফরিদুল ইসলাম।রাজশাহী মহানগরীর বর্ণালীর মোড়ে অবস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন এই খামারে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। ২০১৭ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে প্রথম উঠে আসে রশিদ ছাড়া পোনা বিক্রির অভিযোগ। এরপর ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুদকের গোপন তদন্ত দল চাষিদের সাক্ষ্য নেয়, কিন্তু প্রতিবারই প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।সোমবার (১৯ মে) সকালে এই চক্রের সর্বশেষ চেহারাটি প্রকাশ্যে আসে সময়ের কন্ঠস্বরের সাংবাদিকের সরেজমিন অনুসন্ধানে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ থেকে আসা মাছচাষীরা জানান, তারা প্রতিনিয়ত রেণু পোনা কিনে থাকেন ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা কেজি দরে, অথচ তারা কখনো কোনো সরকারি রশিদ পান না। দেওয়া হয় হাতে লেখা সাদা কাগজের একটি চিরকুট, যা পরবর্তীতে ফিরিয়ে নিয়ে নেওয়া হয়।চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে আসা মৎস্যচাষী জয়নাল আবেদিন বলেন, “আমি রুই, মিরকা আর বাটা মাছের রেণু কিনেছি। দাম নিয়েছে চার হাজার টাকা কেজিতে, রশিদের নামে দিয়েছে সাদা চিরকুট। এটা কি সরকারের নিয়ম?”খামারের ভেতরে সরকার নির্ধারিত দামের কোনো তালিকা টাঙানো নেই। অনুসন্ধানে উঠে আসে, বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি রেণু পোনা বিক্রি হলেও সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে মাত্র ৫ থেকে ৭ কেজির হিসাব। মাসে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ কেজি রেণু বিক্রি হলেও সরকারি রাজস্ব আদায় হয় মাত্র ২০ কেজির দরে। প্রতি কেজির গড় বিক্রয়মূল্য ৩ হাজার ৫০০ টাকা ধরলে বছরে রাজস্ব ফাঁকির অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। গত ১০ বছরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় আনুমানিক ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা।সাবেক কর্মচারী কাইয়ুম, যিনি দুই বছর আগে অবসর নিয়েছেন, তিনিও নিয়মিত খামারে উপস্থিত থাকেন এবং ব্যক্তিগত পেমেন্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপক ফরিদুল ইসলামকে সহযোগিতা করেন। একইভাবে মাস্টাররোলে কর্মরত তরিকুল নিয়মিত রেণু পোনা বিক্রির কাজে যুক্ত। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই দুইজন ফরিদুল ইসলামের ‘ডান ও বাঁ হাত’ হিসেবে কাজ করেন। চুরির ভাগ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, কয়েকজন সহকারী পরিচালক এবং রাজশাহী মৎস্য ভবনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছে পৌঁছায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।রাজশাহী মৎস্য ভবনের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ফরিদুল সাহেব যোগদানের পর থেকেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু রেণু পোনা নয়, মা মাছ সংরক্ষণের পুকুর থেকেও প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকার মাছ পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় কোনো হিসাব নেই, কোনো রাজস্ব জমা হয় না।”চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো এর আগেও অন্তত দুইজন খামার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাদের সাজা হয়নি। বরং কৌশলে বদলি করে দেওয়া হয়। একারণেই ফরিদুল ইসলামও দুর্নীতির ক্ষেত্রে আস্থাশীল হয়ে উঠেছেন। সাংবাদিককে তিনি বলেন, “নিউজ হলে কি হবে, চাকরি তো যাবে না, বদলি হবে শুধু!”সময়ের কন্ঠস্বরের সাংবাদিক জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের কাছে এসব প্রশ্ন তুলে ধরলে তিনি বলেন, “আপনারা যদি ডকুমেন্টস সহ অভিযোগ দেন, আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।” তবে প্রকাশ্য চুরির অভিযোগ নিয়েও তিনি বলেন, “আমার জানা মতে এরকম কিছু ঘটেনি।” সরকার নির্ধারিত দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি জানি না, ফরিদুল সাহেবের কাছে জিজ্ঞেস করুন।”অন্যদিকে খামার ব্যবস্থাপক ফরিদুল ইসলাম বলেন, “সব কিছু তালিকা দিয়ে চলে না। দাম সময় বুঝে ওঠানামা করে।”জেলা প্রশাসকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের দুর্নীতি শুধু সরকারের আর্থিক ক্ষতিই নয়, বরং পুরো মৎস্য খাতের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। চাষীরা নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পোনা পাচ্ছেন না, সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব, এবং তরুণ মৎস্য উদ্যোক্তারা উৎসাহ হারাচ্ছেন।রাজশাহীর এই মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতি এখন আর গোপন নয়। প্রমাণ, সাক্ষ্য এবং মাঠ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ বলছে, এটি একটি সুসংগঠিত চক্রের কাজ, যার পেছনে প্রশাসনিক ছত্রছায়া রয়েছে। সরকারের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে দুর্নীতির তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, না হলে এভাবে একের পর এক খামার ও দপ্তর দুর্নীতির কারণে ধ্বংসের দিকে যাবে।এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
দেশ থেকে অশুভ দূর হয়েছে, যতটুকু আছে তাও চলে যাবে: প্রেস সচিব
দেশ থেকে অশুভ দূর হয়েছে, যতটুকু আছে তাও চলে যাবে: প্রেস সচিব

দেশ থেকে ইতোমধ্যে অমঙ্গল দূর হয়ে গেছে। আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের চেষ্টা করছি। যেটুকু অশুভ আছে, তাও দূর হয়ে যাবে Read more

আজ ‘লাভ রিসেট ডে’
আজ ‘লাভ রিসেট ডে’

Source: রাইজিং বিডি

সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ০.৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর পুরোটাই নগদ Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন