যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের মাকাপুরে দীর্ঘ বছর ধরে জমি নিয়ে হায়দার ধনীর পরিবারের কোন্দলের জেরে ধ্বংসের মুখে পুরো গ্রাম। পরিবারের দুই পক্ষের হয়ে পাল্টাপাল্টি মামলায় সাধারণ কৃষক, নারী, শিশুসহ পুরো গ্রামবাসীর আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছেলে ও মায়ের পক্ষ হয়ে গ্রামের কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি, অন্য পক্ষের কৃষক-সাধারণ মানুষকে ফাঁসাতে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে আসছে। দীর্ঘ ঘটনার জেরে গ্রামবাসী ও প্রশাসনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে দ্বন্দ্ব। গ্রামটি প্রায় পূরুষশূন্য। অভিযোগ রয়েছে, জুলাই অভুত্থানের আগে বিশেষ সুবিধা পেতে ছামছার,বাবুরালি, শহীদুল নিজেরাই মিথ্যা মামলা করে গ্রামবাসীকে ফাঁসাতেন। যার অন্যতম সহযোগী তৎকালীন চৌগাছা থানার ওসি। রাসেলকে নানা সময় অসথ্য তথ্য দিয়ে এবং ভুল বুঝিয়ে টাকা আদায় এবং রাসেলের পৌত্রিক সম্মত্তি বর্গা নিয়ে কোন রকম অর্থ না দিয়ে ভোগ করায় ছিলো তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ। সরকার পরিবর্তনের পর নানা কৌশলে চাঁদা গ্রহণের মাধ্যমে কৃষকদের হয়রানির সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে বর্তমান চৌগাছা থানার এসআই মারুফ। সরেজমিন এলাকা ঘুরে জানা যায়, মৃত হায়দার আলীর  ৩৯ বিঘা ফসলি জমি নিয়ে ব্যারিস্টারপুত্র একেএম মর্তুজা রাসেল ও তার  মা লতিফা হায়দারসহ দুই ভাই রুবেল, বাবু, তিন বোন লাকি, বিউটি এবং লাভলির মধ্যে বিরোধ বাধে। সেখানে রাসেল অভিযোগ করেন তার বাবা তার ফুফুদের প্যাপ্য জমি না দিয়ে তাদের ভাই বোনদের নামে উইল করেছেন। অন্য দিকে পরিবারের সবার অভিযোগ, এখন যে সম্পত্তি রয়েছে সেখানে তাদের প্রাপ্যতা রয়েছে পরিবারের বাইরে অন্য কারো অংশ নেয়।  এ ঘটনায় ছেলে মর্তুজা রাসেল পিতার ৩৯ বিঘা জমি লিখে নেওয়ার জন্য মাসহ পরিবারের সব সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে। অন্যদিকে মাসহ অন্য ভাইবোনেরা তার বিরুদ্ধে মামলা করে। যার জের ধরে ২০২৪ এর ৮ এপ্রিল  মা এবং পুত্র রাসেল পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন। যে সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায় তৎকালীক আ.লীগ চেয়ারম্যান এস এম হাবিব এবং তার বডিগার্ড গান বাবুল রাসেলের পক্ষে অংশ নেন। অভিযোগ রয়েছে সেই সময় এককালিন ৬লাখ নেয় আ.লীগ দুই নেতা । পরবর্তী রাসেলকে জমি বুঝিয়ে দেবে বলে আরো দফায় দফায় চাঁদা গ্রহণ করে। ২৪ এর ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত পুলিশকে জিম্মি করে একপ্রকার প্রভাব বিস্তার করে পরিবারের সদস্যসহ কিছু বর্গা চাষীদের হয়রানী করে আসছিলো আ.লীগের নেতা-কর্মীরা। পরিবর্তীতে চৌগাছা থানার সাবেক ওসি পায়েল কয়েকবার বিষয়টি মিটানোর উদ্যোগ নিলেও গ্রামের সুবিধা নিতে চাওয়া উপরের উল্লেখিত লোকগুলোর জন্য সম্ভব হয়নি। অভিযোগ রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কিছু বিএনপি নেতা আবারো সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে তবে কার্যত আরো জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জানাযায়, রাসেলের মামলার জেরে তার ভাই রুবেল মামলা দায়ের করেছেন। তাদের মামলার বেশিরভাগ আসামি গ্রামের নিরীহ বর্গা চাষী, মজুর ও প্রান্তিক কৃষক।  পাল্টাপল্টি মামলার জেরে গ্রামের প্রতিটি পরিবার কোন না ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ যা পুরো গ্রামকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে দাবি করেন গ্রামের প্রবীনরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কলেজ শিক্ষক জানান, গ্রামের কিছু মানুষ যারা রাসেলের জমি ফ্রি বর্গা করে তারা সুবিধা বজায় রাখতে এবং তার পরিবারের অন্যদের জমিও ফ্রিতে করতে সরাসরি মদদ দিচ্ছে। তাদের পারিবারিক সমস্যা সমাধানের শেষ পর্যায়ে আসার পরিবেশ সৃষ্টি হলেও কিছু মানুষ কখনো চায়নি। যেখানে মো. সাহাজিন এর বড় ছেলে বাবুরালি, হামজা, ছামছার,রবিউল অন্যতম। বাবুরালি ও ছামছার সুবিধা নিতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন । যেখানে যাদের আসামি করা হয় তাদের জামিন আটকাতে নিজের বউকে তারা শ্লীলতাহানী করেছে এমন মিথ্যা তথ্য দিতেও পিছপা হয় না বলে জানা যায়। যা নিয়ে পুরো গ্রাম জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে। শহিদুল নামের এক চাষি মামলা দায়েরের পর নিজে নিজে মাথায় আঘাত করে কিছু চাষীকে ফাসায় যার সত্যতা পাওয়া যায় । তিনি বলেন,  শান্তি পুর্ণ একটি গ্রাম একটি পরিবারের জন্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় পুরো গ্রাম এখন পুরুষশূণ্য প্রতিটি পরিবারের লোক এখন আতঙ্কে দিন কাটছে।  তবে, সেই লোকগুলো বাবুরালি, ছামছার ও শহিদুলের মত লোক পুলিশের সঙ্গে নিয়ে অন্যদের বাড়ি বাড়ি হামলা করাচ্ছে। এটা ন্যকারজনক ঘটনা। ব্যারিস্টার রাসেল জানান, পরিস্থিতির স্বীকার তিনি। তার বাবার সম্পত্তির বিশেষ কোন প্রয়োজন নেয়। বর্তমানে লন্ডনে যে পেশায় আছেন এবং সেখানে তার যে সম্পদ তাতে করে বাংলাদেশের সম্পদের উপর কোন আগ্রহ নেয়। তিনি জানান, একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য তিনিও অপেক্ষা করছেন। তবে, তার ভাই বোন এবং নিজের মা সেই সঠিক সমাধান মানতে নারাজ। একইসাথে গ্রামের কিছু মানুষও কু-পরামর্শ দিয়ে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন,  ২০২৩ সালে সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্য তৎকালীন আ.লীগ নেতারা মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করলেও তারা সমস্যা সমাধান না করে আরো জটিল করে। ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত বর্তমান রাজনৈতিক নেতা -কর্মী, প্রশাসন থেকে শুরু করে নিজ গ্রামের কিছু লোক যার মধ্যে হামজা, শহিদুল, ছামছার, বাবুরালি, রফিকুল, ফুলজার, লাল্টুসহ গ্রাম এবং গ্রামের বাইরে যে অর্থ দিয়েছি তার পরিমাণ প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা। সেই টাকা কাকে-কিভাবে মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংকে দিয়েছি তার সম্পূর্ণ প্রমাণ রয়েছে। বর্তমান সম্যসার বিষয়ে অবগত জানিয়ে বলেন, তিনি চান সুষ্টূ সমাধান। দেশের আইন এবং জমির দলিল অনুযায়ী যার যতটুকু প্রাপ্য সে ততটুকু নিলে তার কোন অভিযোগ নেয় বলে জানান তিনি। লন্ডন প্রবাসী রুবেল বলেন, সম্পত্তির জের ধরে যে সমস্যার সুত্রপাত তার সমাধান চায়। যারা মামলা করেছে তারা হয়রানীমুলক সকল মামলা তুলে নিলে সকলের ন্যায্যতার ভিত্তিতে আইন ও দলিল মেনে যারযার অংশ বুঝে নিতে প্রস্তুত। গ্রামের বর্তমান সর্বশেষ পরিস্থতি খুবই হতাশাজনক। এমন পরিস্থিতি কখনোই আমাদের কাম্য নয়। চলমান কয়েক বছরের ইস্যুকে কেন্দ্র করে জনঅস্তোষ থেকে পুলিশের সঙ্গে একটি ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটেছে যা খুবই দুঃখজনক। যেখানে পুলিশ বাদী মামলা হয়েছে যারফলে, পুরো গ্রাম এখন আতঙ্কগ্রস্থ রয়েছে। আমরা আশা করবো পুলিশ আইনের রক্ষক তারা সাধারণ মানুষের উপর হয়রানি বন্ধ করবে। স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি পুলিশ সাদা পোশাকে  (সিভিল) মাকাপুর গ্রামের বাজারে পৌঁছে সেখানে আসামী ধরতে উদ্দ্যত হয়। সাধারণ মানুষ তাদের পরিচয় এবং গ্রেফতারের ওয়ারেন্ট আছে কিনা জানতে চাইলে সাধারণ মানুষের  ওপরে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।  এতে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর মাকাপুর গ্রামবাসীর মধ্যে পুলিশ আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ি পুরুষ শূন্য হওয়াতে ঝুকি সৃষ্টি হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ে। এই বিষয়ে চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, ব্যারিস্টার পরিবারের অনেক জমি রয়েছে। এই জমি নিয়েই তাদের ভাই বোনদের মধ্যে দীর্ঘ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। স্থানীয় একটি মহলের সুবিধার্থে পরিবারটির দ্বন্দ্ব এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। এলাকার দুই পক্ষ তাদের দুই ভাইকে শেল্টার দিয়ে থাকে। যে কারণে তারা কেউ কাউকে ছাড় দিতেও নারাজ। এক প্রশ্নে ওসি জানান, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলায় এই পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিরীহ মানুষকে মামলায় আসামি করা হয়নি। গণগ্রেফতার করা হয়নি। মামলার পর থেকে আতঙ্কে অনেকেই গ্রামছাড়া। তবে নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। গ্রামবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী জানান, গ্রামের নারী পুরুষ শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। নিরীহ মানুষকে হয়রানি না করার জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। উল্লেখ্য, মাকাপুর গ্রামের হায়দার আলী নামের একজন ৬ ছেলে-মেয়ে ও এক স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পরে লন্ডন প্রবাসী ছেলে ব্যারিস্টার মর্তুজা রাসেলের সঙ্গে তার মা লতিফা হায়দার ও ভাইবোনদের সঙ্গে জমিজমা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ হয়। বিরোধের ঘটনায় মা লতিফা ও ব্যারিস্টার ছেলে মর্তুজা রাসেল পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও করেন। একপর্যায়ে রাসেল ৩৯ বিঘা জমি লিখে নেয়ার অভিয়োগে মাসহ পরিবারের সব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায় ২০২৩ সালে আ.লীগের নেতারা সুবিধা নেয় তবে তা অমিমাংসিত থাকে। ২৪ এর জুলাই অভুত্থানের পর উপজেলার প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা স্থানীয় আপস-মীমাংসা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ ২০শে এপ্রিল বিরোধপূর্ণ জমির ধান কেটে নেয়ার অভিযোগে চৌগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন রাসেল। এই মামলার আসামি সাজেদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে গেলে হামলার শিকার হয় পুলিশ। চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।এমআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
জার্মানিকে রুখে দিয়ে শেষ ষোলোতে সুইজারল্যান্ড 
জার্মানিকে রুখে দিয়ে শেষ ষোলোতে সুইজারল্যান্ড 

ইনজুরি সময়ে গোল খেয়ে নিশ্চিত জয় হাতছাড়া করে সুইজারল্যান্ড। পয়েন্ট ভাগাভাগি করে শেষ পর্যন্ত গ্রুপ ‘এ' থেকে জার্মানির সঙ্গে সুইসরা নক Read more

গবিতে দলীয় ছাত্র সংগঠনের উঁকিঝুঁকি
গবিতে দলীয় ছাত্র সংগঠনের উঁকিঝুঁকি

রাজনীতি মুক্ত সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) ক্যাম্পাসে চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের আনাগোনা। প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর ধরে ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস Read more

চরফ্যাশনের লঞ্চঘাটে নৌবাহিনীর অভিযান
চরফ্যাশনের লঞ্চঘাটে নৌবাহিনীর অভিযান

ভোলার চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চঘাটে আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও চাঁদাবাজি রোধে বাংলাদেশ নৌবাহিনী বিশেষ Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন