পড়ন্ত বিকেল, এই বুঝি সন্ধ্যা নেমে এলো। হাসপাতালে আহত রোগীর স্বজনেরা কেউ কাঁদছেন ও কেউ হাসছেন। স্বজন অসুস্থতার কারণে কেউ আবার মন খারাপ করে বসে আসেন। আবার কর্ম ব্যস্ত মানুষের বাড়ি ফেরার তোড়জোর। ঠিক তখনি যশোর শহরের কুইন্স ও দড়াটানা হসপিটাল ও প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে গাছের ডালপালায় ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি উড়ে এসে বসছে। তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। চড়ুই পাখির মিলনমেলার দৃশ্য দেখে অনেকের মন ভরে যায়। ক্লান্ত মনে ফিরে আসে প্রশান্তি। স্বজন অসুস্থতার কষ্টে কাতর মানুষগুলোর কিছুটচ মন ভালো করে দেয় চড়ুইদের দুষ্টুমি। গ্রাম ছেড়ে ব্যস্ততম শহরের এই জায়গায় যেন তাদের নিরাপদ আবাস। শহরের ঝলমলে আলোও ঘুম ভাঙাতে পারে না হাজার হাজার চড়ুইয়ের। তবে ভোরের আলো ফুটতেই উড়াল দেয় অজানায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিকেলের পর থেকে কুইন্স হসপিটালের সামনের দেবদারু গাছ ও দড়াটানা হসপিটালের সামনের কাঠালগাছে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি এসে বসতে থাকে। গাছের ডালে জায়গা না হলে বিদ্যুতের তারে আশ্রয় নেয়। বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত হাজার হাজার পাখির মিলনমেলায় পরিনত হয়। কলকাকলিতে সেখানকার পরিবেশ মুখর হয়ে ওঠে। পাখিগুলো গাছেই রাত কাটায়। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও তারা গাছে বসে রাত পার করে। ভোরে কিচিরমিচির শব্দ করতে করতে খাদ্যের সন্ধানে বেরিয়ে যায়।প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিচে নিপু ড্রাগ হাউজের সত্ত্বাধিকারী আহসান কবীর নিপু জানান, গাচের ডাল ও পাতার ফাঁকে ফাঁকে শুধু চড়ুই আর চড়ুই। পাখিদের দুষ্টুমি যেনো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কেউ অতিষ্ঠ হন না। কেউ যেনো পাখিগুলোর কোনো ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য নজর রাখেন তারা। দড়াটানা হাসপাতালের নিচের টং দোকানি মাসুদুর রহমান জানান, আসরের আজানের পরেই চড়ুই পাখি এই কাঁঠাল গাছে আসতে শুরু করে। কেউ কাউকে কোন ক্ষতি করেনা। বৃষ্টির সময় চড়ুই পাখিগুলো খুব কষ্ট পায়। আমি ১০ থেকে ১২ বছর ধরে দেখছি, অসংখ্য চড়ুই পাখি কাঁঠাল গাছে রাত্রিযাপন করে। কুইন্স হসপিটালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন আতিয়ার রহমান জানান, নিকটতম স্বজন অসুস্থতার কারণে মনটা খারাপ। যে কারণে দেবদারু গাছের পাশে বসেছিলেন। গাছের ডালে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ও দুষ্টুমিতে মন অনেকটা ভালো হয়ে গেছে। সেখানে অবস্থান করে দেখা যায়, বিদ্যুতের তার, ও গাছের ডালে ডালে চড়ুই পাখি বসে আছে। হইহুল্লোড় আর চেঁচামেচি শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই দৃশ্য পথচারীরা মোবাইলে ধারণ করছে। আবার অনেকে ছুটে আসেন পাখিদের মিলনমেলা দেখতে।এমনি একজন ইমদাদুল হোসেন জানান, পাখিগুলো নাচানাচি ও কিচিরমিচির করে। যা দেখতে খুবই ভালো লাগে। যানবাহনের শব্দের মাঝেও গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে পাখি দেখে তার মতো অনেকেই মুগ্ধ হন। পাখিদের টানে তিনি প্রায় এখানে আসেন।হসপিটালে অসুস্থ আত্মীয়কে দেখে ফিরছিলেন গোলাম মোস্তফা ও রফিকুল ইসলাম। তারা জানান, কুইন্স হসপিটালে গিয়েছিলেন অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে। বিষন্ন মন নিয়ে হাসপাতালের নিচে আসেন। হঠাৎ চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে থমকে যান তারা। পাখিদের সম্মেলন দেখে তারা রীতিমতো মুগ্ধ।সেখানকার কয়েকজন দোকানদার জানান, বছরের পর বছর ধরে দেবদারু গাছ ও বিদ্যুতের তারে চড়ুই পাখির বসবাস। পাখিদের প্রতি হসপিটালের কর্মচারী, আশেপাশের দোকানদার ও অনেক ইজিবাইক- রিকশা চালকের বাড়তি দরদ তৈরি হয়েছে। কেউ যেনো পাখিদের সমস্যা না করে সেদিকেও তারা খেয়াল রাখেন। কুইন্স হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ড হারুন অর রশিদ জানান, ১০ মাস চড়ুই পাখিরা এই গাছে থাকে। বাকি ২ মাস ডিম বা বাচ্চা ফুটানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাদের আসতে শুরু হয়। সব মিলিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির প্রতি ভালোবাসা আর সচেতনতা সৃষ্টির দাবি করেন তিনি।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর