আজ মধ্যে রাত থেকে শেষ হচ্ছে ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে দেওয়া ইলিশ শিকারের দুই মাষের নিষেধাজ্ঞা। ফলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন ভোলার দুই লক্ষাধিক জেলে।বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাত ১২ টা থেকে শেষ হচ্ছে এই দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে অনেক কষ্ট আর দূর্দশা নিয়ে সময় করেছন জেলে পল্লীর মানুষগুলো। টানা দুই মাসের অলস সময় শেষে নদীতে নামার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। দিন–রাত এক করে জাল, নৌকা মেরামতের কাজে নেমেছেন জেলেরা। ইলিশ ধরে ঋণের টাকা শোধ করবেন, এ আশায় বুক বেঁধে আছেন। সকাল থেকে ভোলার বেশ কয়েকটি মৎস্য ঘাট ঘুরে দেখা যায়, জেলেরা জাল ও নৌকা সংস্কার করছেন। গত দুই মাস অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকা নৌকা যত্নসহকারে মেরামত করছেন। কেউ কেউ আবার নতুন নৌকা তৈরি করে তাতে সরঞ্জামদি সাজাচ্ছেন।মাঝিমাল্লাদের নিয়ে কাজ করছেন জেলেরা।ভোলার খাল এলাকার শাহাজান মাঝি জানান, দুই মাস পর বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাচ্ছি। সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা মানতে আমরা নদীতে যাইনি। নিষেধাজ্ঞার সময়ে দেওয়া আমাদের খাদ্য সহায়তার চাল পেয়েছি। যদি সরকার চালের সাথে অন্যান্য সমগ্রী দিতেন তাহলে হয়তো আমরা আরো একটু ভালো থাকতে পারতাম।তুলাতুলি মৎস্য ঘাট এলাকার জেলে মনির মাঝি জানান, মহাজন থেকে দাদন ও এনজিও থেকে টাকা নিয়ে নতুন জাল আর ইঞ্জিন নিয়ে আজ রাতে নদীতে নামবো। নদীতে ভালো ইলিশ পেলে ধারদেনা পরিশোধ করে ঘুরে দাড়াতে পারবো। একই এলাকার জসিম মাঝি জানান, অভিযানের সময় খুব হতাশায় দিন পার করেছি। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। আজ থেকে অভিযান শেষ হয়েছে, তাই রাতেই মাঝিমাল্লা নিয়ে নদীতে যাবো। এজন্য ডিজেল ও বাজার সামগ্রী কিনেছি। নদীতে ভালো ইলিশ পেলে আমরা একটু ঘুরে দাড়াতে পারবো।এদিকে জেলেদের পাশাপাশি আড়ৎদাররাও বসে নেই। তারা তাদের ঢালা ও আড়ৎ মেরামতে ব্যস্ত। সেই চিরচেনা আড়ৎ গুলো যেনো প্রান ফিরে পাবে ইলিশের হাঁকডাকে। ইলিশ ধরে যখন জেলেরা তীরে ফিরবেন তখনই বেচাকেনার ধুম পরবে মৎস্য আড়ৎ গুলোতে।আড়ৎদাররা বলছেন, দীর্ঘদিন আড়ৎতে মাছ বেচাকেনা বন্ধ রেখেছেন। আজ থেকে জেলেরা মাছ ধরতে যাবে। তাই তারাও আড়ৎ খুলে বসেছে। জেলেদের জালে মাছ উঠলে একদিকে যেমন জেলেরা লাভবান হবে অন্যদিকে তাদেরও আয় বাণিজ্য ভালো হবে বলে জানান তারা।জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, নিষেধাজ্ঞার দুই মাসে ভোলার ৭ উপজেলায় ৫৪০টি অভিযানসহ ৬০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। ৬টি মামলা হয়েছে এবং দুই জেলেকে জেলে পাঠানো হয়েছে।ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, আজ রাত ১২টা থেকে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আমরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি। মা ইলিশ প্রচুর পরিমাণে ডিম ছেড়েছে, নদীতে থাকা জাটকাগুলো বড় হওয়ার সুযোগ দিয়েছি। আশা করছি এসব জাটকা ইলিশ হয়ে ফিরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পরবে। যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোলায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।উল্লেখ, মা ইলিশ রক্ষায় ও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকার। এ সময় সকল প্রকার মাছ শিকার, ক্রয়, বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফলে বেকার হয়ে পড়েন ভোলার ১ লাখ ৭০ হাজার ২৪৩ জন নিবন্ধিতসহ প্রায় ৩ লাখ জেলে। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৮৯ হাজার ৬০০ জেলের জন্য ১৬০ কেজি করে চাল বিতরন করা হয়েছে। এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর