রাজধানীর দারুসসালাম থানাধীন গৈদারটেকে সরকারী খালসহ শত কোটি টাকা মূল্যের সরকারী জমি অবৈধ ও আইনবহির্ভূত দখল নিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়, সংঘবদ্ধ একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। ফলে বৃষ্টি কিংবা বর্ষাকালে এ অঞ্চলের পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে চরম জনদূর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকার দুই লক্ষাধিক বাসিন্দা।সম্প্রতি দখলবাজ, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু চক্রটি পেশীশক্তির বলে সরকারী খালের দুই পাড়সহ আশপাশের শত শত কোটি টাকা মূল্যের সরকারী জমি দখল পুনঃ উদ্ধার করতে নির্বাহী প্রকৌশলী এনওসিএস, ডিপডিসির বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এলাকাবাসি।এলাকাবাসির দাবি, আগামী বর্ষাকালের আগে গৈদারটেকের এই সরকারী রামচন্দ্রপুর খালটিসহ (মৌলভীখাল) এসকল সরকারী জমি পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে দূর্দশা ও জনদুর্ভোগের শেষ থাকবেনা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গৈদারটেকসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। তবে এই বিশালাকার ঘনবসতিপূর্ণ নিন্মাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকাটি সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। বিশেষ করে বর্ষাকালে এলাকার প্রতিটি বসতবাড়ি, বাণিজ্যকি দোকানপাটসহ ঘরবাড়িতে ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত পানি প্রবেশ করে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। গেলো বছর বর্ষায় টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এলাকার প্রতিটি বসত বাড়িতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে প্রায় সপ্তাহব্যাপী আটকে ছিলো। প্রতিটি বাসায় কোমড় পর্যন্ত পানি থাকায় শিশু বাচ্চাদের নিয়ে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছিলো। নষ্ট হয়েছিলো লাখ লাখ টাকার আসবাবপত্র। এর পেছনের কারণ হচ্ছে, গৈদারটেক এলাকার পয়নিষ্কাশন ও সুয়ারেজ ব্যবস্থায় কার্যকর রামচন্দ্রপুর তথা মৌলভী খাল (আঞ্চলিক লোকমুখে প্রচলিত নাম) নামে খালটিসহ আশপাশের বিপুল পরিমানে সরকারী জমি বেদখল হয়ে যাওয়া। একমাত্র এই খালটি দিয়েই বন্যা কিংবা বৃষ্টির পানি পার্শ্ববর্তী তুরাগ নদীতে গিয়ে পড়ে। এলাকাবাসির আরো অভিযোগ গত ৫ ই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পরপরই এলাকার জনৈক নুরুল হক, তাজুল ইসলাম, সোহরাব হাজী, আকরামসহ চিহ্নিত কিছু ভূমিদস্যু স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ চক্র সরকারী খালটিকে ভরাটসহ আশপাশের বিএডিডিসি, সিটি কর্পোরশেনসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের জমি দখলের অসুস্থ প্রতিযোগীতায় লিপ্ত রয়েছে। এই ভূমিদস্যু ও দখলবাজ সিন্ডিকেটে পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি নামে একটি ডেভলপার প্রতিষ্ঠানসহ এধরণের আরো একাধিক প্রতিষ্ঠানও জড়িত রয়েছে। সরকারী জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ এই ভূমিদস্যু চক্রটি এলাকার সরকারী জমিগুলোকে অবৈধ দখলে নিয়ে স্থানীয় ভূমি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে ম্যানেজ করে, নামে বেনামে ভুঁয়া কাগজপত্র তৈরী করে বিক্রির নামে অসদুপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।জুয়েল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রতিযোগিতা মূলক দখলবাজি ও চাঁদাবাজির এই বিপুল অংকের অবৈধ অর্থের ভাগাভাগি কেন্দ্রীক নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জের ধরে এলাকায় সম্প্রতি একাধিকবার বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেও লিপ্ত হয়েছে একাধিক গ্রুপ। এসংশ্লিষ্ট ঘটনায় একাধিক মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তারও হয়েছেন কেউ কেউ। এই দখলবাজি কেন্দ্রীক প্রভাব বিস্তারের জেরে ফের যেকোনো সময় বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণহাণির আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায়না। ইয়াসমি আক্তার নামে আরো একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এই সংঘবদ্ধ সুচতুর দখলবাজ, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু চক্রটি পেশীশক্তির বলে সরকারী খালের দুই পাড়সহ আশপাশের শত শত কোটি টাকা মূল্যের সরকারী জমি অবৈধ ও আইনবহির্ভূত দখল নিয়ে নিন্ম আয়ের বিভিন্ন শ্রেনীপেশার জনগণ ও অটোরিক্সার গ্যারেজ তৈরী করে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে। একেকটি রিকশার গ্যারেজে শতাধিক অটোরিক্সা রেখে বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে ম্যানেজ করে অবৈধ, অনিরাপদ, চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে সহস্রাধিক অটোরিক্সা চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আরো অর্ধশতাধিক ভারী মেশিন বসিয়ে এমব্রয়ডারি কারখানা বসানো হয়েছে। সেখানেও বৈদ্যুতিক সংযোগ নিতে নিয়ম নীতির কোনো দরকারই করা হয়নি। আবাসিক এলাকায় অর্ধশতাধিক এমব্রয়ডারি কারখানার শব্দে রাতে ঘুমানো যায় না। এতে করে এলাকার শিক্ষার্থীদেরও পড়াশোনায় চরম ব্যাঘাত ঘটছে। এসকল সংযোগে নিন্মমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার ও ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না রাখার কারণে যেকোনো সময় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট কিংবা বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির আশংকাও রয়েছে। অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন খাল পারাপারে তারা অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূতভাবে খালটিকে ভরাট করে রাস্তাও নির্মাণ করেছেন। এ বিষয়ে এনওসিএস ডিপডিসির আদাবর শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আয়াতু্লাহ ইমরান বলেন, এলাকাবাসির একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। খুব শিঘ্রই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর