কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গ্রাহকদের ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তার অভিযোগ উঠেছে চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কিছু মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকশত গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন নেওয়া এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসেছেন উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের কয়েক শতাধিক গ্রাহক। গ্রাহকদের অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন। ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১০ সালে ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চাঁনপুর চক বাজারে প্রধান কার্যালয় গড়ে তোলে চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত ও প্রতি লাখে দুই হাজার টাকা মুনাফা দিবে মাস শেষে এমন প্রলোভন দেখিয়ে একই গ্রামের শাহ আলম মিয়া মানুষ জনের কাছ থেকে টাকা নেন। প্রতি মাসে ব্যবসায়িক মুনাফা পাওয়ায় অনেকে প্রবাসে আয় করা টাকা, জমি বিক্রির টাকা এমন কি অন্যান্য ব্যাংকে রাখা টাকাও উত্তোলন করে বিনিয়োগ করেন চাঁনপুর মাল্টিপারপাস নামের এই সময়বায় সমিতিতে। এছাড়া চাঁনপুর গ্রামের মসজিদ কমিটির সভাপতি ও একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সবাই তাকে বিশ্বাসও করেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে গ্রাহকের কাছ থেকে একেক অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এসব টাকা নেয়ার সময় সবার হাতেই একাধিক ব্যাংকের চেক ধরিয়ে দেন। এসব চেকের মাধ্যমে প্রায় ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে রাতের আধারে স্ত্রী-সন্তার নিয়ে পালিয়ে গেছেন।চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে লাপাত্তা হয় চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের স্বত্বাধিকারী মো. শাহ আলম। এমন সংবাদ পেয়ে চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সামনে এসে জড়ো হয় ভুক্তভোগী গ্রাহকসহ এলাকার লোকজন। পরে তারা প্রতারক শাহ আলমের বাড়িতে গেলে জানতে পারেন সেটি এক প্রভাবশালীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে আরও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন শতাধিক গ্রাহক।আসাদ মিয়া নামে এক গ্রাহক বলেন, সমিতির কার্যক্রম শুরুর পর ভালই চলছিল। গ্রাহকদের পাওনা মুনাফা সময়মত পরিশোধ করা হতো। আমার মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সাড়ে ৮লাখ টাকা জমা রাখি, বিয়ে টিক হওয়ার পর টাকা ফেরত চাইতে গেলে এক সাপ্তাহ সময় দিয়ে পালিয়ে যায় শাহ আলম। আজগর মিয়া নামে আরেক গ্রাহক বলেন, আমার জীবনের সঞ্চয় করা ৩৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের পর কয়েক মাস একটা লভ্যাংশ পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সব কার্যক্রম বন্ধ করে সমিতির লোকজন পলাতক। আরেক গ্রাহক শফিক মিয়া বলেন, আমার নিজের ও দুই বোনের মিলিয়ে মোট ৯ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম এই সমিতিতে। বর্তমানে সমিতির কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না, কার্যালয়ও তালাবদ্ধ।ভৈরব উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রুবাইয়া বেগম জানান, ২০১০ সাল থেকে সমিতিটি পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে নিয়মিত অডিটের সময় এই সমিতি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন কোনো অনিয়ম বা অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এখন অভিযোগ এসেছে, তারা কার্যক্রম বন্ধ করে পালিয়ে গিয়েছে। যদি গ্রাহকরা অভিযোগ দেই তাহলে সমিতির সদস্য বা গ্রাহকদের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে জেলা কার্যালয়ে প্রতিবেদনে পাঠানো হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সমিতির নিবন্ধন বাতিল করাসহ সমিতির ম্যানেজিং কমিটির অনন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ এর আইনে মামলা গ্রহণ করা হবে।ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন, সমবায় সমিতির কার্য নির্বাহী কমিটির সভাপতির মাধ্যমে এলাকাবাসী যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সে ক্ষেতে যেহেতু এটি প্রতারণা, মামলাটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হয়। কোনো ভুক্তভোগী স্বপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেন তাহলে আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা প্রধান করা হবে। তাছাড়া সমবায় সমিতিটি যেহেতু সরকারি ভাবে নিবন্ধিত এবং ঘটনাটি সভাপতি মাধ্যমে ঘটেছে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের মাধ্যমে আমরা প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর