আলু বিক্রির পর কৃষিকাজ চালিয়ে যেতে পারবেন কি না, সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন বোয়ালীয়া গ্রামের কৃষকরা। একদিকে আলুর দরপতন, অন্যদিকে দেনার বোঝা, সব মিলিয়ে দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিন কাটছে গলাচিপার কৃষকদের।আলুর ভালো ফলন হলেও দাম কমে যাওয়ায় এবং সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা ক্ষেতেই পাইকারদের কাছে কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার আলু জমাট করে রাখতে টাল তৈরি করেছেন, কেউবা গাছ কেটে মাটির নিচে সংরক্ষণ করছেন। কিন্তু তাতেও ভয় কাটছে না। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে ক্ষেতেই হাজার হাজার মন আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপায় আলু চাষের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালের দিকে। প্রথমদিকে ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। গলাচিপার মুরাদনগর, বোয়ালীয়া ও চরখালী গ্রামে সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়।এবছর উপজেলায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার (৩৬৫ হেক্টর) চেয়ে বেশি। প্রতিটি হেক্টর জমিতে ২৮ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু চাষিরা এখন বিপাকে। ক্রেতা নেই, সংরক্ষণের হিমাগার নেই, পাইকাররা সুযোগ নিচ্ছে, ফলে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তারা।গলাচিপার সেলিম নামের এক কৃষক সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের কাছে হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান। তিনি বলেন, যদি হিমাগার থাকত, তাহলে আমাদের এই দুঃসময় দেখতে হতো না। আলু সেখানে সংরক্ষণ করে ভালো দামে বিক্রি করতে পারতাম।গলাচিপার মুরাদনগর গ্রামের আবু সালেহ (৫০) এবছর ৪০ কড়া জমিতে আলু চাষ করেছেন। তার ভাষায়, প্রতি কড়ায় ৫,৫০০ টাকা খরচ হলেও ফলন হয়েছে ৮-১০ মন। প্রথমদিকে পাইকাররা ৬৯০ টাকা মন দরে কিনলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম নেমে এসেছে ৬০০ টাকায়। একই গ্রামের রেজাউল করিম, শামীম হাং, রহমান হাং ও মিলন মিয়া জানান, দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষেতেই আলু রেখে দিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, ন্যায্য মূল্য না পেলে পরের মৌসুমে কেউ আর আলু চাষে আগ্রহী হবে না।উত্তর চরখালী গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন ৮০ কড়া জমিতে আলু চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “লাভ তো দূরের কথা, সমান থাকাই দায়। এখনো ক্ষেত থেকেই আলু তুলতে পারিনি।”এদিকে গলাচিপার আলুক্ষেতে শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। মিতু বেগম, লিজা আক্তার, শাহিনুর বেগম ও রিনা বেগম প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কষ্ট করে কাজ করেন। কিন্তু পুরুষদের সমান পরিশ্রম করেও তারা অর্ধেক মজুরি পান। পুরুষ শ্রমিকরা যেখানে ৬০০ টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন, সেখানে নারীরা পাচ্ছেন মাত্র ৩০০ টাকা।তিনি আরও বলেন, আমরা সমান পরিশ্রম করি, কিন্তু মজুরি অর্ধেক। রমজানের দিনে এত কাজের পরও ন্যায্য মজুরি পাই না।গলাচিপার কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, আলু একটি সবজি, যা আগাম চাষ করলে কৃষকরা বেশি লাভবান হতে পারেন। বোয়ালীয়ার কৃষক মোশারেফ চকিদার পাশের উপজেলায় ১০০ মন আলু বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা লাভ করেছেন বলে জানান। কৃষির এ কর্মকর্তার মতে, যদি কৃষকরা ধৈর্য ধরে সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে পারেন, তাহলে তারা লাভের মুখ দেখবেন।তবে কৃষকদের একটাই দাবি হিমাগার চাই। তাহলে ভবিষ্যতে তারা লোকসানের শিকার না হয়ে লাভবান হতে পারবেন। গলাচিপার হাজারো কৃষক এখন একটাই দাবি তুলেছেন। আলুর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে, সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ করতে হবে। যদি এসব ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আগামীতে অনেকেই আলু চাষ থেকে সরে আসতে বাধ্য হবেন কৃষক। কৃষকদের প্রশ্ন, সার, বীজ, শ্রমিক সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাহলে আমাদের উৎপাদিত ফসলের দাম কমছে কেন? এখন দেখার বিষয়, কৃষকদের এই সংকট সমাধানে সরকার বা প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়।এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
ছুরিকাঘাতে হাসপাতালে ইয়ামালের বাবা
ছুরিকাঘাতে হাসপাতালে ইয়ামালের বাবা

বার্সেলোনা ও স্পেনের ১৭ বছর বয়সী ফুটবল প্রতিভা লামিনে ইয়ামালের বাবা ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মঙ্গলবার ছুরিকাঘাতের শিকার Read more

কেনিয়ায় বন্যায় আরও ১০ জনের মৃত্যু
কেনিয়ায় বন্যায় আরও ১০ জনের মৃত্যু

কেনিয়ায় বন্যায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় স্ত্রীকে হত্যা 
মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় স্ত্রীকে হত্যা 

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় মাদক সেবনে বাধা ও টাকা না দেওয়ায় গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত 
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত 

আগামী ৫ জুন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। সোমবার (১৩ মে) সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা স্থগিত করা Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন