শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মানাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের একসঙ্গে ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ তাঁদের রূপপুর প্রকল্প ও গ্রিন সিটি বহুতল আবাসিক এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে পৃথক চিঠি দেওয়া হয়েছে।চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। গতকাল শনিবার(১০ মে) রাতেকোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদুল হাছান স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক আদেশে এই চাকরিচ্যুতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে রবিবার সকালে চাকরিচ্যুত ওই ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির ই-মেইলে দাপ্তরিক আদেশের চিঠি পাঠিয়ে তা প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। রূপপুর প্রকল্পের সাইড ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, বিষয়টি সম্পর্কে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অথরিটির প্রধানকে অবহিত করা হয়েছে। তিনিও এ ব্যাপারে জেনেছেন। এর বেশি তাঁর জানা নেই।চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সূত্রে জানা গেছে, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. মোঃ জাহেদুল হাছান স্বাক্ষরিত একটি অব্যাহতিপত্রে কোম্পানির ১৮ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ঢাকায় আলোচনা চলমান রেখেছেন।চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হলেন, প্রকল্পের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট হাসমত আলী(প্রধান কার্যালয়), উর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম, আবু রায়হান, রফিকুল হাসান, আয়নাল হোসেন, নাঈম আল সাকিব, আবু সাঈদ, এ কে এম আব্দুল আল আমিন, শাহ ইখতিয়ার আলম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল নোমান, আসিফ খান, মুহাম্মদ ইমামুল আরেফিন, ইকরাম, রুহুল আমিন, উপ-সহকারী ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন, রুবেল হোসেন এবং টেকনিশিয়ান ফিরোজ আহমেদ।চাকরিচ্যুতির দাপ্তরিক ওই আদেশপত্রে বলা হয়েছে, এনপিসিবিএল কোম্পানিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এনপিসিবিএলের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পৃথক আরেকটি পত্রে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের রূপপুর প্রকল্প এলাকায় ও গ্রিন সিটিতে প্রবেশ বন্ধে অনুরোধ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে।ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের মধ্যে উপ-সহকারী ব্যবস্থাপক রুবেল হোসেন জানান, এমডি ড. জাহেদুল হাসানের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবী দেওয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করায় আমাদেরকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিরপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক স্পর্শকাতক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে রূপপুর প্রকল্প সার্বক্ষণিক আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থার নজরদারিতে থাকে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আন্দোলন, সমাবেশ বিশ্বে নজিরবিহীন। প্রকল্প এলাকায় নিরপত্তার শর্ত ভেঙে মিছিল-সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা শুধু চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজই করেননি, প্রকল্পের অগ্রগতি ও পরবর্তী ধাপের লাইসেন্স প্রাপ্তিও হুমকিতে ফেলেছেন। ফলে নীতিগত ভাবেই তাদের চাকুরিতে বহাল থাকার কোন সুযোগ নেই। তাদের অন্য কোন চক্রান্ত বা যোগসাজশ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পের কর্মীদের চাকুরী সংক্রান্ত অভাব অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের হঠকারী আচরণে মনে হয়েছে তারা পরিকল্পিত ভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মাঠে নেমেছে। নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের দাবির যৌক্তিকতা বিচার করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা তা শুনতে নারাজ। সূত্রটি আরো জানায়, এনপিসিবিএল এর কর্মকর্তা কর্মচারীরা সরকার মালিকানাধীন সকল কোম্পানির চেয়ে বেশী বেতন পেয়ে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ, এনপিসিবিএল এ ৭ম গ্রেড এর কর্মকর্তা সিনিয়র এসিটেন্ট ম্যানেজারের মূল বেতন ৭৫ হাজার ৬ শত টাকা। বাড়ী ভাড়া ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ হারে ৩০ হাজার ২৪০ টাকা থেকে ৪৫ হাজার ৩৬০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ২৫০০ টাকা, স্পেশাল এলাউন্স ৫ শতাংশ হারে ৩৭৮০ টাকা ৪০ শতাংশ প্রজেক্ট ভাতা ৩০ হাজার ২৪০ টাকা সহ সর্বসাকুল্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ৩৬০ টাকা পান। এর সাথে ৪ শতাংশ ইনক্রিমেন্টও পান। একই ভাবে অন্যান্য গ্রেডের কর্মকর্তারাও সরকারী অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে অনেক বেশী বেতন পেয়েও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি, প্রমোশনসহ নানা দাবিতে আন্দোলনের নামে হট্টগোল করছেন। এমনকি নির্মাণ ও অর্থায়নকারী রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ও কর্মকৌশল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য ও বিষোদগার করেছেন। যা পরবর্তী কার্যক্রমে এই প্রকল্পের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, চরম স্পর্শকাতর ও নিরাপত্তা বেষ্টিত নিউক্লিয়ার প্লান্ট এলাকায় এধরনের কর্মসূচি পালনের নজির বিশ্বে কোথাও নেই। এমন চলতে থাকলে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো বিপজ্জনক হয়ে যাবে। সেফটি কালচার, সিকিউরিটি কালচার, কোড অব কন্ট্রাক্ট সবকিছু মেনে চলতে হবে। ‘প্রকল্পে যেসব ঘটনা ঘটছে তা খুবই দুঃখজনক পারমাণবিক কেন্দ্র শান্তিপূর্ণভাবে চালানোর ক্ষেত্রে এধরনের কর্মকাণ্ড অন্তরায়। বিষয়টি সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদ হাছান বলেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে  নীতিমালা ও চাকুরী বিধি অনুযায়ীই অব্যাহতি প্রাপ্তদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এর বেশী কিছু বলার নেই।উল্লেখ্য, বিভিন্ন দাবিতে  ঈশ্বরদীর রূপপুরে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বড় অংশ গত ২৮ এপ্রিল আন্দোলন শুরু করেন। ৬ মে তাঁরা ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। পরদিন ৭ মে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে কোম্পানির অফিসে তারা অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন। এতে এনপিসিবিএল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি ও কোম্পানির আইন মেনে চলার চিঠি দেয়।এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
জাতীয় ঈদগাহে প্রধান উপদেষ্টার নামাজ আদায়
জাতীয় ঈদগাহে প্রধান উপদেষ্টার নামাজ আদায়

জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে Read more

স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য উদ্দেশ্য পুরণ হয়নি, মুফতি মাসুম বিল্লাহ
স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য উদ্দেশ্য পুরণ হয়নি, মুফতি মাসুম বিল্লাহ

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেছেন, ৫৪ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ Read more

টিভিতে আজকের খেলা
টিভিতে আজকের খেলা

Source: রাইজিং বিডি

রংপুরের ২ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর
রংপুরের ২ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যার সময় দায়িত্বে থাকা রংপুর পুলিশের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন