প্রায় ২শ বছরের পুরনো টাঙ্গাইল পৌর এলাকার কান্দাপাড়া যৌনপল্লী। এখানে প্রায় ৮শ ঘরে প্রায় পাঁচ শতাধিক যৌন কর্মীর বসবাস। দেহ ব্যবসার জন্য গড়ে ওঠা এ পল্লীতে এখন চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। যেখানে খুব সহজেই নিরাপদে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন করে যাচ্ছে মাদকসেবিরা। অনায়াশেই এখানে মিলছে মরন নেশা ইয়াবা, হিরোইন, গাঁজা ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রকমের মদসহ নানা ধরনের নেশার উপাদান। শুধু তাই নয় মাদক ব্যবসা বদলে দিয়েছে পুরো পল্লীকে। যেখানে মাদক সেবনের জন্য বিভিন্ন বয়সের লোকের আনাগোনা চলে।যৌনকর্মীরা অভিযোগ করে জানান, এখানে যৌনপল্লীর কর্মীরা সারিবদ্ধভাবে বসে থাকে খদ্দেরের জন্য। বেশিরভাগ সময় খদ্দের মেলে না। কিন্তু যারা মাদকের সাথে জড়িত তাদের কর্মচাঞ্চল্যতা রয়েছে। তাদের কদর এখানে বেশি, তারা মাদকসেবিদের আশ্রয় দেয় ও নিজে মাদক গ্রহণ করে। অথচ যারা মাদকের সাথে জড়িত নয় তাদের অনেকেই তিনবেলা ঠিকমত খাবার জোগার করাটাই কষ্টকর। তবে ব্যাতিক্রমও আছে। যারা দেখতে সুশ্রী তাদের কদর রয়েছে। তাদের রোজগারও ভালো। আবহাওয়া ভালো থাকলে খদ্দের জুটতে সমস্যা হয়না।যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য সেবা ঝুঁকিতে। এইডস্ এর মত মরণব্যাধিতে আক্তান্ত কতজন তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। যৌনকর্ম করতে আসা পুরুষেরা অনেকেই নিরাপদ যৌনমিলনে অনাগ্রহী। পেটের তাগিদে খদ্দেরের খাম-খেয়ালীপনায় বেশির ভাগ সময়ই অনিরাপদ যৌনতায় রূপ নেয়।দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু মানুষ টাঙ্গাইল শহরে পরিবার পরিজন ছেড়ে রিকসা চালাতে এসেছেন। আর এতেই যৌনপল্লীতে কিছুটা খদ্দের বেড়েছে বলে জানান যৌনকর্মীরা।যৌনকর্মী সুমি (ছদ্মনাম) বলেন, ১০ বছর আগে বিয়ে হয় পাশের গ্রামের এক ছেলের সাথে। বিয়ের তিন/চার বছর পর সুখী জীবনের আশায় গার্মেন্টস এ দুজনে চাকরি করবো এমন সিদ্ধান্তে ঢাকায় চলে আসি। গার্মেন্টসে দুইজনের চাকরি যোগাতে আমার স্বামী তার এক বন্ধুকে বাসায় নিয়ে আসে। চাকরির প্রলোভনে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হই। আমার স্বামী জানতে পেরে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে গ্রামে চলে যায়। আমি ঢাকায় থেকে যাই। স্বামীর বন্ধুর সাথে স্বামী-স্ত্রীর মত বসবাস শুরু করি। কিছুদিন পরে টাঙ্গাইলে শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা করবো এমন সিদ্ধান্তে তার সাথে একরাতে চলে আসি। আমাকে বসতে বলে মাঝরাতে এই পল্লীতে আমাকে রেখে চলে যায়। আর সে ফিরে আসেনি। এরপর আমাকে তালাবদ্ধ ঘরে রাখা হয়। মাঝে মাঝে খাবার আর খদ্দেরের জন্য তালা খোলা হয়। প্রথম কদিন মেনে নিতে পারিনি, এখন সয়ে গেছে। আমার একটাি সন্তান রয়েছে। বাড়ির সবাই জানে আমি চাকরি করছি।ময়মনসিংহ যৌনপল্লী থেকে আসা যৌনকর্মী মিতু (ছদ্মনাম) বলেন, যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছি ৮ বছর। এখন এ পেশায় টাকা নেই। তবে আমার খদ্দের আছে। তারা টাকা দিয়ে সুখ কেনে। কেউ কেউ নিরাপদে নেশা করে চলে যায়।যৌনকর্মী সন্ধ্যা (ছদ্মনাম) বলেন, যৌনপল্লীতে এখন আগের মত রোজগার নাই। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা নেই। নিজের খাবার আর বাসা ভাড়া দেওয়ায় এখন মুশকিল। বাসা ভাড়া দিতে না পারায় প্রতিদিনই বাড়ছে দেনা। মানবিকতা আর নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত আমরা।এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, যৌনকর্মীদের প্রতিবন্ধী হিসেবে ট্রিট করি আমরা। সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্য আমাদের টাঙ্গাইলের সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত কোনো কার্যক্রম নেই।যৌনকর্মীদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকা থাকবে এটাইতো স্বাভাবিক। তাদেরও ভোটাধিকার রয়েছে। সংখ্যায় কম হলেও তাদের ভোটেও গঠিত হয় স্থানীয় সরকার, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর। অথচ তাদের অস্বস্তিকর পরিবেশ ও নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঈদেও তাদের জন্য কোনো সরকারি বরাদ্দ ছিলো না। যৌনকর্মীরা মনে করে, রাষ্ট্র তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হবেন। আরো দায়িত্ববান হবেন সংশ্লিষ্টরা।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর