চট্টগ্রামের সংস্কৃতির গর্ব ও শতবর্ষী ঐতিহ্যের ধারক আব্দুল জব্বারের বলীখেলা এবার পা দিচ্ছে ১১৬তম বর্ষে। আগামী শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে বিকেল ৪টায় বসছে এই খেলাধুলা ও কৃষ্টির অন্যতম বড় আয়োজনের আসর। বলীখেলাকে ঘিরে ২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল বসছে তিনদিনব্যাপী বৈশাখী মেলা, যা স্থানীয়দের কাছে শুধুই উৎসব নয়, বরং ইতিহাসের ধারাবাহিক স্মারক।বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়কাল। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখে বদরপাতির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসংস্কারক আব্দুল জব্বার সওদাগর শারীরিক সক্ষমতা ও মনোবল বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুবকদের প্রস্তুত করতে চালু করেন এই বলীখেলা। তাঁর সেই স্বপ্ন আজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে, রূপ নিয়েছে বৃহত্তর এক লোকজ ঐতিহ্যে।বর্তমানে আব্দুল জব্বারের উত্তরসূরি ও আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শওকত আনোয়ার বাদলের নেতৃত্বে এই ঐতিহাসিক আয়োজন টিকে আছে তার ঐতিহ্যিক ধারাবাহিকতায়। তিনি সময়ের কণ্ঠস্বর-কে জানান, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবারও শতাধিক বলী ইতোমধ্যেই যোগাযোগ করেছেন। প্রতিযোগী প্রত্যেককে সম্মানি দেওয়া হবে। চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপদের জন্য রয়েছে ট্রফিসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার।’এবারের আয়োজনে মেলাব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। পুলিশ প্রশাসনের সুপারিশে নগরের আন্দরকিল্লা থেকে কোর্ট বিল্ডিং পর্যন্ত প্রধান সড়কে কোনো স্টল বসানো যাবে না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এখানে দোকান বসানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এবার ক্ষুব্ধ। কেউ কেউ মাঝ রাস্তায় ডিভাইডারে বসে ব্যবসা চালানোর চেষ্টা করছেন, নিরাপত্তা ও বিক্রির অনিশ্চয়তা নিয়েই।দুই নারী দোকানি জানান, ১৫-২০ বছর ধরে এখানে আসি। এবার এত নিয়ম, এত বাঁধা! জানলে আর আসতাম না। কিন্তু এখন তো এসে পড়েছি, তিনদিন কোনোভাবে থাকতে হবে।এই বলীখেলা শুধু শারীরিক প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি চট্টগ্রামের ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও জনমানসের অন্তর্গত প্রাণ। কিন্তু এত বড় আয়োজনের রয়েছে কিছু অপ্রকাশ্য প্রশ্ন। আয়োজনে যে আয় হয়—তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব কোথাও নেই। ফাইন্যান্সিয়াল ট্রান্সপারেন্সির অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ।তিনি বলেন, “এমন একটি ঐতিহাসিক আয়োজনে আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা থাকা আবশ্যক। ফান্ড কোথায় যায়, কে দেখে, কারা তত্ত্বাবধানে থাকে—এসব প্রশ্নের জবাব নেই। বলীখেলা নিয়ে যেমন আবেগ, তেমনি জবাবদিহিতাও প্রয়োজন।”তিনি আরও বলেন, এই আয়োজনে জব্বারের স্মরণে কোনো স্থায়ী প্রতিষ্ঠান, একাডেমি, স্মারকগ্রন্থ কিংবা সেমিনার এখনও হয়নি। এটা জব্বার পরিবারেরই দায়িত্ব ছিল প্রথমে এগিয়ে আসার। তাহলেই সরকার বা ইউনেস্কোকেও বাধ্য করা যেত।শুধু আয়োজনে সীমাবদ্ধ না থেকে এবার বলীখেলাকে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি লালদীঘি চত্বরকে নামকরণ এবং ‘বলীখেলা একাডেমি’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল রিজিয়নের রিজিওনাল হেড মোহাম্মদ মোরশেদ আহমেদ সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, আমরা স্থানীয় কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক হতে পেরে গর্বিত।এ বছরের বলীখেলা উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর