একজন তরুণ ছাত্রনেতা। স্বপ্ন ছিল সমাজ পরিবর্তনের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। অথচ আজ সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। প্রতিহিংসার রাজনীতির নির্মম শিকার হয়ে নিজের অস্তিত্বই রক্ষার লড়াইয়ে ব্যস্ত তিনি। নাম তার মোঃ শাহাদত হোসেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের একজন ছাত্র।দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে আজ নিজেকে প্রমাণের লড়াইয়ে ব্যস্ত এক যোদ্ধা। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শাহাদত হোসেন তার জীবনের নানান বাঁক তুলে ধরেন। এক সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হরিয়ান ইউনিয়ন ছাত্রদলের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।রাজনৈতিক সক্রিয়তার কারণে ২০১৩ সালে বিস্ফোরক মামলার আসামি হয়ে কারাভোগও করতে হয় তাকে। সেই থেকে এখনো দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।বক্তব্যে শাহাদত বলেন, কে বা কারা আমার রাজনৈতিক ইমেজ নষ্ট করতে চাইছে। আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব ছবি কোনো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নয়, বরং কোচিং ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি থেকে বাঁচতেই কোনোভাবে লিয়াজো করে চলতে হয়েছে। তারা আমাকে বাধ্য করে ছবি তুলেছে যাতে ভবিষ্যতে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে।একটি ছবিতে তাকে দেখা গেছে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি নলখোলা তরুণ সংঘের সভাপতি হিসেবে এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলাম। সেই সময় চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে মতবিনিময়ের ছবিটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তোলা। অথচ সেটিও এখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।২০ এপ্রিল পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে অনুষ্ঠিত ছাত্রদলের এক কাউন্সিল নিয়েও তাকে ঘিরে শুরু হয় নতুন বিতর্ক। শাহাদত দাবি করেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে পাবনায় গিয়েছিলাম। কাজ শেষে কাউন্সিল সম্পর্কে শুনে গিয়ে কিছু পরিচিত ভাইদের সঙ্গে দেখা করি। সেখানে কোনো দায়িত্বে ছিলাম না, কেউ আমাকেও ডাকেনি। অথচ সেই ছবি ছড়িয়ে আমাকে কাউন্সিলের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।অপর এক অভিযোগে বলা হয়, ছাত্র আন্দোলনের সময় তার বাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শাহাদত এ অভিযোগকে সম্পূর্ণ অমূলক আখ্যা দিয়ে বলেন, “যাদের বাইক পুড়েছে, তারা মতিহার থানায় মামলা করেছে। সেই মামলায় ভুক্তভোগী ও বাইকের রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ অভিযুক্তদের নাম রয়েছে। সেখানে আমার নাম নেই।একটি কমিটির ছবিতে থাকা একজনের সঙ্গে নামের মিল থাকলেও, শাহাদতের দাবি, “আমার নাম মোঃ শাহাদত হোসেন, আর ছবিতে থাকা ব্যক্তির নাম শাহাদাত হোসেন। কেবল নাম মিলে গেলেই কি মানুষ এক হয়ে যায়?৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এক কুচক্রী মহল তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদা আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শাহাদত। তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাকে আবারও মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়। গত ২ মার্চ বোয়ালিয়া থানায় একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাকে হয়রানি করা হয়। আমি ডকুমেন্টসহ পুলিশ কমিশনার বরাবর আবেদন করলে তিনি সত্যতা যাচাইয়ের আশ্বাস দেন, বলেন তিনি।সাংবাদিক সম্মেলনের শেষ অংশে এসে শাহাদত বলেন, আমি কখনো আন্দোলন বিরোধী কাজে জড়িত হইনি। বরং প্রথম থেকেই ছাত্র আন্দোলনের পক্ষেই ছিলাম। আজ যে কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিহিংসার রাজনীতি নতুন নয়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—শুধু কিছু ছবি, কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে কি একজন তরুণ নেতার সমগ্র রাজনৈতিক জীবন ও সামাজিক পরিচয় প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত? একজন ব্যক্তি কি একসঙ্গে দুই পক্ষের মামলার আসামি হতে পারেন? এ প্রশ্নগুলো ছুঁড়ে দেন শাহাদত হোসেন।বক্তব্যের শেষাংশে একবুক হতাশা আর ক্ষোভ নিয়ে শাহাদত বলেন, আমি ব্যক্তিগত আক্রোশ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে মুক্তি চাই। আমি চাই সত্য উদঘাটিত হোক, এবং যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা যেনো শাস্তি পায়।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর