গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মজুত থাকা বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ নষ্ট হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতায় সময়মতো রোগীদের মাঝে বিতরণ না করায় হাসপাতালে মজুত থাকা এসব ওষুধ এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গিয়েছে। এতে সরকারি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে; একই সঙ্গে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে হাজারো রোগী।স্থানীয় সূত্র এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. মামুনুর রহমান। ওষুধের মজুত, বিতরণ ও মেয়াদ নিয়ে কোনো ধরনের পর্যবেক্ষণ বা দায়িত্বশীল পদক্ষেপ তার পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি।সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, এমন গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি ডা. মামুনুর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতার অভাব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি ওষুধ লুকিয়ে রাখা, সময়মতো বিতরণ না করা এবং সংরক্ষণের ঘাটতির কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন হাজারো রোগী। অথচ এই অবহেলার দায় কোনোভাবে নিরূপণ না করেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, পশ্চিম পাশের একটি কোয়াটার বিল্ডিং এর নিচে পরিত্যক্ত ফ্লোরে বিপুল পরিমাণ ওষুধ মজুদ করে রাখা হয়েছে। সেখানে থাকা দুটি ইউনিটের পাঁচটি রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সরকারি এসব ওষুধ। সময়মতো এগুলো বিতরণ না করায় যা এখন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী। এছাড়াও সেখানে থাকা দুটি রুমে হাসপাতালের জন্য ক্রয় করা বিভিন্ন সরঞ্জাম পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে তৎকালীন কাপাসিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা ডা: মামুনুর রহমান দায় চাপাচ্ছেন বদলি হওয়া স্টোরকিপার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা জোসনা বেগম বলেন, ‘গত এক বছরে আমি কয়েকবার এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি, কিন্তু তারা কোনো ওষুধ আমাকে সরবরাহ করতে পারেনি। অথচ জানতে পারলাম, হাসপাতালে বহু ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ। যারা এই অন্যায় কাজ করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।’জানা যায়, এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সপ্তাহে পাঁচ দিন সিজারিয়ান অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বারিষাব ইউনিয়নের বেলায়েত হোসেনের স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন হয়। সেই অপারেশনে তাঁদের পাঁচ হাজার টাকার মতো চিকিৎসা ব্যয় হয়। তার মধ্যে আড়াই হাজার টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। এত ওষুধ মজুত থাকা সত্ত্বেও কেন রোগীদের সেবার কাজে ওষুধগুলো বিতরণ করা হয়নি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি এই হাসপাতালে দায়িত্ব গ্রহণকরেছি কয়েকদিন আগে। যোগদানের পর প্রায় ২০ লাখ টাকার ওষুধের চাহিদা দিয়েছি। আমার যোগদানের পর এই হাসপাতালে যত সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে, তার জন্য কোনো রোগীকে বাইরে থেকে কোনো ওষুধ কিনতে হয়নি। সকল ওষুধ এই হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করেছি। এখন যেই ওষুধগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে স্টোরে রয়েছে, সেগুলো আমি যোগদানের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন মো. মামুনুর রহমান ১৪ মার্চ ২০২২ থেকে ৯ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী ঘরনার ডাক্তার হিসেবে কাপাসিয়ায় তিনি বেশ দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। কাপাসিয়া ৪ আসনের সংসদ সদস্য সিমেন হোসেন রিমিকে মা ডেকে তার বেশ আস্থাভাজন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এর আগেও গত বছর এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি টেন্ডার কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। সে সময় বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী বলেন, ‘ওষুধগুলো মূলত বাইরে বিক্রির জন্য স্টোরে জমা করে রাখা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর সারাদেশের মতো এই হাসপাতালের পরিবেশেরও পরিবর্তন হয়। যে কারণে এই ওষুধগুলো বিক্রির জন্য বাইরে বের করতে পারেনি। এত ওষুধ স্টোরে জমা ছিল, তা ব্যবহার করেও শেষ করতে পারেনি।’স্টোরের দায়িত্বে থাকা আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারির মাস থেকে আমি দায়িত্ব পালন শুরু করেছি। এর আগে দায়িত্বে ছিলেন মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি আমাকে কোনো কিছু বুঝিয়ে দিয়ে যাননি।’তবে হাসপাতালের একটি একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, আব্দুর রাজ্জাক দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় হিরণ নামে একজনকে স্টোরকিপার এর দায়িত্ব দেয়া হয়। এ বিষয়ে কথা বলতে আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল নম্বর কল দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: মো. মামুনুর রহমান একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্বে থাকাকালীন গত এক বছরে স্টোরের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যান। বদলি হওয়ার সময় স্টোরে কী পরিমাণ ওষুধ জমা রয়েছে, তার কোনো হিসাব দিয়ে যাননি। ফলে স্টোরে কী পরিমাণ ওষুধ রয়েছে, তার হিসাব রাখা সম্ভব হয়নি। একটি বিল্ডিং এর নিচে এসব ওষুধ মজুদ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন, সেই রুমের চাবি স্টোর কিপারের কাছে চাইলে তিনি দেননি। তবে এরপরই তিনি আবার সেই রুমের বিষয়ে কিছু জানেন না এমন বক্তব্য দেন।সচেতন মহল বলছেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিই যদি তদন্ত কমিটি গঠন করে তাহলে তদন্ত নিয়ে পক্ষপাতিত্ব হতে পারে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিৎ, ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করা এবং সরকারি এসব সম্পদ নষ্ট করার কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারি এসব ওষুধ নষ্ট করার কোন সুযোগ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করার। এ ঘটনায় যেই দায়ী হোক তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।এসকে/আরআই

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
জাতিসংঘে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস
জাতিসংঘে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রেসিডেন্টে জো বাইডেনের দেওয়া গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অবশেষে পাস হয়েছে।

স্রষ্টা আপনাকে ভালো রাখুন কিশোরদা : কনকচাঁপা
স্রষ্টা আপনাকে ভালো রাখুন কিশোরদা : কনকচাঁপা

বাংলা গানের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের আজ চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। সহকর্মীরা এই ‘প্লেব্যাক সম্রাট’-কে স্মরণ করছেন।

ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করলো পাকিস্তান
ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করলো পাকিস্তান

ভারতের সাম্প্রতিক সীমান্ত আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তান বিমান বাহিনী কমপক্ষে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের Read more

আটলান্টিকের গভীরে মনুষ্যবাহী গভীর ডাইভিং করলো চীন
আটলান্টিকের গভীরে মনুষ্যবাহী গভীর ডাইভিং করলো চীন

আটলান্টিকে মনুষ্যবাহী গভীর-ডাইভিং গবেষণা সম্পন্ন করেছে চীন।

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন