ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে শহরের প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বাস টার্মিনাল এলাকায় গড়েছেন আলিশান তিন তলা ভবন। নামে -বেনামে বিভিন্ন স্থানে কিনেছেন লাখ লাখ টাকার জমি।এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে অনেক ঠিকাদারের দুর্নীতি চাপা দেওয়া সহ অসংখ্য অভিযোগ বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাম্প চালক মোহাম্মদ জুবায়ের এর বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৪ সালে মাসিক সাকুল্যে ৭ হাজার টাকা বেতনে বান্দরবান জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাম্প চালক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন মোহাম্মদ জুবায়ের।তিনি পাম্প চালক পদে নিয়োগ পেলেও যথাযথ সরকারি বিধিমালা অনুসরণ না করে এবং নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘ সময় ধরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাব সহকারীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।চাকরিতে যোগদানের পর থেকে নিজের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন না করে উর্ধতন কর্মকর্তাকে কিভাবে খুশি করা যায় এই নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। এর মধ্যে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সাথে গড়ে তোলেন সখ্যতা।সেই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে তৎকালীন বান্দরবান জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন এর আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে তিনি যেনো আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান। শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাশ হওয়া সত্বেও অস্থায়ী ভাবে দায়িত্ব পান হিসাব সহকারী হিসেবে । সুত্র জানায়,২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে পাম্প চালক জুবায়ের অঘোষিত ভাবে হিসাব সহকারীর দায়িত্ব পেয়ে যথেষ্ট বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।তাঁর দুর্ণীতির মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে যায়। ২০২০ সালে তৎকালীন একজন নির্বাহী প্রকৌশলী জুবায়ের এর সমস্ত অপকর্ম সম্পর্কে জেনে ও তাকে হিসাব সহকারীর দায়িত্ব পালনের মৌখিক অনুমতি দেন।এদিকে সরজমিনে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিউগুলশান এলাকায় অবস্থিত একমাত্র পাম্প স্টেশন টি ঘুরে এসে দেখা যায়, সেখানে রয়েছে যথেষ্ট জনবল সংকট। মাষ্টাররুলে (ডেইলি বেসিস পেমেন্ট) কিছু সংখ্যক লাইনম্যান ও পাম্প চালক দিয়ে চলছে পানি সরবরাহের কার্যক্রম। সরকারি ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত পাম্প চালক থাকা সত্বেও পাম্প স্টেশনের জনবল সংকট নিরসন না করে উল্টো একজন পাম্প চালক কে হিসাব সহকারীর দায়িত্ব পালনে বহাল রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল।এই বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাম্প স্টেশনে কর্মরত একজন কর্মচারী সময়ের কন্ঠস্বর কে বলেন,জুবায়ের সাহেব হলো ডিপার্টমেন্টের বিশাল ক্ষমতাশালী একজন মানুষ, তার তো বিরাট একটা বাড়ি আছে,আমাদের অনেকের এই পদে চাকরি করে বাসাভাড়া দেওয়া ও বিষন কষ্ট হয়ে যায়”।সরজমিনে আরো জানা যায়, পাম্প চালক মোহাম্মদ জুবায়ের এর বাড়ি টি চক্ষু হাসপাতাল হিসেবে বেশ পরিচত। ওই বাড়ি টির দ্বিতীয় তলা কয়েক লক্ষ টাকার চুক্তিতে চক্ষু হাসপাতাল হিসেবে ভাড়ায় দিয়েছিলেন তিনি।ভাড়ার চুক্তি নামায় (এগ্রিমেন্ট পেপার) জুবায়ের এর সাক্ষর রয়েছে। অবশ্য গতবছর চক্ষু হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠান টি অনত্র্য স্থানান্তরিত করে।বাড়িটির নিজ তলায় প্রায় ১০ টির অধিক দোকান আছে। দোকান গুলোর ভাড়া দেওয়ার সময় দোকানী দের থেকে নেওয়া হয়েছে মোটা অংকের (সালামি) জামানত । দোকান গুলোর মধ্যে একটি দোকান, জুবায়ের এর আপন ছোট ভাই নিজে মেডিসিন শপ হিসেবে পরিচালনা করেন।এছাড়াও নামে – বেনামে শহরের বিভিন্ন স্হানে কিনেছেন লাখ লাখ টাকার জমি। সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাম্প চালক মোহাম্মদ জুবায়ের বর্তমানে কোটি টাকার মালিক। সামগ্রিক বিষয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ জুবায়ের এর কাছে জানতে চাইলে, তিনি অকপটে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাশ বিষয় টা স্বীকার করেন।এছাড়াও বান্দরবানের যৌথ খামার ও কানা পাড়া এলাকায় ২ গন্ডা অর্থাৎ চারশতক জমি আছে বলেও স্বীকার করে বলেন,আরে ভাই পাহাড়ে ২/১ গন্ডা জায়গা, ওইগুলো তো ৩-৪ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। বাস স্টেশন এলাকায় বিশাল বহুল বাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমার ভাইদের ও আমার টাকা দিয়ে নির্মাণ করেছি। আপনার বর্তমান পদবী কি এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও তিনি সময়ের কন্ঠস্বর কে বলেন, আমি পাম্প চালক হিসেবে চাকরি করি এখন অফিস যদি আমাকে হিসাব শাখায় রাখতে চায় তাহলে সেখানে আমার কি দোষ। আপনি কি অফিস আদেশে হিসাব সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন,এই প্রশ্নের প্রত্তুরে তিনি বলেন, অবশ্যই,এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে আমাকে হিসাব সহকারী পদে কাজ করার লিখিত অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে এর কাছে প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিলো, একজন অষ্টম শ্রেণি পাশ পাম্প চালক কিভাবে হিসাব শাখায় কাজ করছেন,এই প্রশ্নের প্রত্তুরে তিনি বলেন,দেখেন অষ্টম শ্রেণি পাশ হলেও এটা তো আর রকেট সাইন্স না, সে দীর্ঘ ১০-১৫ যাবৎ সময় ধরে দেখে দেখে কাজ শিখেছে তাই তার অভিজ্ঞতা কে মূল্যায়ন করে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তবে তিনি কোনো কাগজ পত্রে সাক্ষর করেন না। পাম্প স্টেশনে জনবলের কোন সংকট নেই দাবি করে তিনি আরো বলেন সেখানে যথেষ্ট জনবল আছে।প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিলো সরকারি ভাবে মাত্র দুইজন জন পাম্প চালক আছে বিষয় টি সঠিক কিনা? এর উত্তরে অনুপম বলেন, জ্বী সঠিক।তাহলে তো জনবল এর সংকট থাকার কথা,তাই নয় কি? প্রত্তুরে এই কর্মকর্তা বলেন, সেগুলো ডেইলি বেসিস পেমেন্ট এর মাধ্যমে কয়েকজন কে নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। জুবায়ের এর অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তিনি কিছু ই জানেন না বলে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্পদের হিসাবের বিষয় টি আমরা সরাসরি ঢাকা অফিসে প্রেরণ করি,তাই তার অর্থাৎ জুবায়ের এর সম্পদ নিয়ে আমার কিছু জানা নেই। এসময় নির্বাহী প্রকৌশলী অভিযুক্ত জুবায়ের পক্ষে যথেষ্ট সাফাই দেন এই প্রতিবেদক এর কাছে।এই বিষয়ে জানতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই (জনস্বাস্থ্য বিভাগের সরাসরি দায়িত্ব প্রাপ্ত) এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ‘আমি যথেষ্ট ব্যাস্ত আছি,পরে কথা বলবো” বলে কল কেটে দেন।এদিকে একজন পাম্প চালকের (পদ মর্যাদায় চতুর্থ শ্রেণি) কর্মচারী কিভাবে কোটিপতি বনে গেলেন এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার সচেতন মহল।এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর