ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং সেখানে সাংবাদিক হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থা’। একইসঙ্গে, ইসরায়েলের সঙ্গে সকল প্রকার কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিম বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১১টায় নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিরোপয়েন্টে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থা, রাজশাহী মহানগরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজশাহীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গাজা ও রাফায় ইসরায়েলের চলমান বর্বর হামলায় হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শতাধিক শিশু ও নারী রয়েছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো—ইসরায়েলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমের ওপর আঘাত হানছে। গত ৮ এপ্রিল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে অন্তত ২১১ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়। এ পরিস্থিতিকে তারা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সহযোগীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে বিচার করার দাবি জানান।মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা যুদ্ধের মধ্যে থেকেও নিরপেক্ষভাবে তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইসরায়েল সাংবাদিকদের হত্যা করে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ গোপন করতে চায়। তারা চায় না বিশ্ববাসী জানুক, গাজায় কী পরিমাণ মানবিক বিপর্যয় চলছে। আরও বলেন, ইসরায়েল শুধু একটি রাষ্ট্র নয়—এটি বর্তমানে একটি দখলদার ও সন্ত্রাসী শক্তিতে পরিণত হয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।বক্তারা আরও বলেন, মুসলিম বিশ্ব যদি ঐক্যবদ্ধ হতো, তাহলে এই রকম গণহত্যা এতটা দীর্ঘস্থায়ী হতো না। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক মুসলিম দেশ এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বক্তারা বলেন, এখনই সময় মুসলিম বিশ্ব নেতাদের জেগে ওঠার। তারা আহ্বান জানান, মুসলিম দেশগুলো যেন অবিলম্বে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ায়।মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থা, রাজশাহী মহানগরের সভাপতি গুলবার আলী জুয়েল। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ রকি। বক্তৃতা দেন সংগঠনের আহ্বায়ক সরকার শরিফুল ইসলাম, সদস্য সচিব মো. আফজাল হোসেন, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রফিক আলমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।গুলবার আলী জুয়েল বলেন, “একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য এভাবে দিনের পর দিন হামলা চালানো ইতিহাসে নজিরবিহীন। কিন্তু তার চেয়েও ভয়ংকর বিষয় হলো—এ ধরনের নৃশংসতা আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিচারহীনই থেকে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের লোকজন হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, আমরা যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি—আজকের মানববন্ধন তারই একটি অংশ।সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ রকি বলেন, “যেসব সাংবাদিক গাজায় নিহত হয়েছেন, তারা শুধু ফিলিস্তিনের নয়, আমাদেরও সহকর্মী। আমরা তাদের হারিয়েছি। এ শোক শুধু ফিলিস্তিনের নয়, এটি বাংলাদেশের প্রতিটি সাংবাদিকের, প্রতিটি বিবেকবান মানুষের।”মানববন্ধনে বক্তারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সাংবাদিকদের জীবন রক্ষায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। যুদ্ধক্ষেত্রেও সাংবাদিকদের রক্ষা করা আন্তর্জাতিক আইনে বাধ্যতামূলক। কিন্তু ইসরায়েল এসব আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে।তারা বলেন, ফিলিস্তিনে সাংবাদিকদের হত্যা শুধু পেশাদারিত্বের ওপর নয়, এটি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপরও সরাসরি আঘাত। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।এই মানববন্ধনের মাধ্যমে বক্তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা এবং সাধারণ জনগণকে ফিলিস্তিনের পক্ষে সরব হওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, “আমরা যদি চুপ করে থাকি, তাহলে একদিন আমাদের দেশেও এমন অন্যায় নামতে পারে।”সংগঠনের আহ্বায়ক সরকার শরিফুল ইসলাম বলেন, “ইতিহাস সাক্ষী, যে জাতি প্রতিবাদ করতে জানে না, তারা বারবার নির্যাতনের শিকার হয়। আজ যদি আমরা নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে না দাঁড়াই, তাহলে আগামীকাল হয়তো আমাদের কেউ পাশে থাকবে না।”রাজশাহীর সাংবাদিকরা আজ শুধু প্রতিবাদ করেননি, তারা একজোট হয়ে জানান দিয়েছেন যে—সাংবাদিক হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ মেনে নেওয়া হবে না। তারা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ ধরনের কর্মসূচি শুধু প্রতিবাদ নয়, এটি মানবতার পক্ষে একটি অবস্থান।ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় নিহত সকল সাংবাদিক এবং নিরীহ জনগণের স্মরণে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয় কর্মসূচির শেষপর্বে।এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর