মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় চিকিৎসাধীন এক রোগীর দেহে “ও পজিটিভ ” রক্তের পরিবর্তে “বি পজিটিভ ” রক্ত পুশ করার পর মো. বিল্লাল নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে ।শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকাল ৪ টার দিকে ভুল করে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করার পর রাত ১০টার দিকে রোগীর মৃত্যু হয়।নিহত মো. বিল্লাল মিয়া মানিকগঞ্জ সদর উপজেরার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। গত বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে তিনি মানিকগঞ্জ মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।রোগীর স্বজনরা বলেন, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে আমাদের কাছে ভুল রক্ত দেয়া হয়েছে। আমরা সেটি এনে নার্সের কাছে দেয়ার পর নার্সরা বলে ডাক্তারের অর্ডারপত্র লাগবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার রক্ত দেখে অর্ডার পত্র দিয়েছে। এরপর নার্সরা রোগীর শরীরে সেটি পুশ করেছে। এরপর থেকেই রোগীর সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আমরা তখনও বুঝিনি যে রোগীকে ভুল রক্ত দেয়া হয়েছে। পরে বাইরের একজন লোক দেখে আমাদের বলে রোগীকে ভুল রক্ত দেয়া হচ্ছে। এরপর আমরা হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তারদের অনেক ডাকাডাকি করলেও তারা এসে রোগীর কোন চিকিৎসা দেয়নি। তারা তড়িঘরি করে সেই রক্তের ব্যাগ ও রক্ত সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে চলে যায়।পরে রাত ৮ টার দিকে আরেকজন ডাক্তার এসে আমাদের রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলে। আমরা বলেছি, রোগীকে ঢাকায় নেয়ার মত অবস্থা আমাদের নেই। এটা একটা সরকারি মেডিকেল কলেজ, আমাদের রোগীর চিকিৎসা এখানেই করেন। তারপর তারা রোগীকে আর কোন চিকিৎসা দেয়নি। রোগীর স্বজনরা আরও বলেন আপনারা ( সাংবাদিকরা) আসার পর হাসপাতালের লোকজন রোগী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। সাংবাদিক আসার আগে আমাদের কোন কথাই তারা আমলে নেয় নি।রোগীর স্বজনরা আরো বলেন, এটি ভুল রক্ত নাকি সঠিক রক্ত সেটি বুঝার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। তারা তিন জায়গায় চেক করে রক্ত দিয়েছে। এক জায়গায় ভুল হতে পারে, তিন জায়গায় তো ভুল হওয়ার কথা না। তাদের ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণেই আমাদের রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জ মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আহমেদ জানান, বিকেল চারটার দিকে ডিউটিতে ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশি ওমেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহান। সেসময় রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয়েছে। এরপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আমি রাত আটটায় ডিউটি শুরু করেছি। আমি ডিউটি শুরু করার পর যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি। এরপরও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।তিনি আরো বলেন, রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে কাগজপত্র না দেখে রক্ত পুশ করা ঠিক হয়নি। এটি একটি মারাত্মক ভুল। রোগীর মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে কি’না জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। ভুল রক্ত পুশ করার বিষয়টি উল্লেখ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এটি করা হয়েছে।এ বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশি ও ঘটনার সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নূরজাহানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।এদিকে, মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন , এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ, মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিম্ন মানের চিকিৎসা নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘ দিনের। এছাড়াও সেবার মান নিয়ে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে বহু সংবাদ প্রকাশিত হলেও টনক নড়ে না কর্তৃপক্ষের। ইন্টান চিকিৎসক দিয়ে চলছে এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা। এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর