চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দিনভর উত্তপ্ত ছিল কলেজ ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এক নারী শিক্ষককে কলেজে না আসার মৌখিক নির্দেশ দেওয়া এবং কলেজ পরিচালনা কমিটিতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিএনপি নেতার আত্মীয়কে সদস্য করায় প্রতিবাদরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে দুই নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে দশটার দিকে ঘটনার সূত্রপাত। অভিযোগ রয়েছে, কলেজ পরিচালনা কমিটির সদ্য নির্বাচিত সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন কলেজের এক নারী শিক্ষককে মৌখিকভাবে কলেজে না আসার নির্দেশ দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা টেস্ট পরীক্ষা বর্জন করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।এদিকে আরেকটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনজুরুল আলম মঞ্জু, যিনি স্থানীয়ভাবে ‘কাট্টলী মঞ্জু’ নামে পরিচিত। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তার চাচা ও আকবরশাহ থানা বিএনপির নেতা মাঈনু চৌধুরীকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করান। এতে শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয় এবং বিষয়টি দ্রুত শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে একাধিকবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, কাট্টলী মঞ্জু ও সিরাজ উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রদল কর্মীরা কলেজে ঢুকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করে। একাধিক শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়, যার মধ্যে দুইজন নারী শিক্ষার্থীও রয়েছেন।ঘটনার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতৃবৃন্দ কলেজে এসে পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রদল কর্মীরা তাদের ওপরও হামলা চালায়। এনসিপির কোতোয়ালী থানা সংগঠকের ওপর প্রকাশ্যে হামলার অভিযোগ উঠেছে।বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কলেজ প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বৈঠকে বসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। তবে আলোচনার একপর্যায়ে কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে উপস্থিত পক্ষগুলোর মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়, যা একসময় হট্টগোল ও হাতাহাতিতে রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতেই সংঘর্ষ বাধে।ঘটনার জেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আকবরশাহ থানা ঘেরাও করে। একই সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের প্রায় ২০০ নেতাকর্মী থানার সামনে অবস্থান নেয়। রাত দশটা পর্যন্ত তাদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা থানার ভেতরে আটকে ছিলেন বলে জানা গেছে।আহতদের মধ্যে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এসএম মারুফ ও আয়াত নামের দুই কর্মী এবং দুইজন নারী শিক্ষার্থী। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, পুরো ঘটনার সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। হামলাকারীদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলেও দাবি করেন তারা। ঘটনার পর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে আতঙ্ক বিরাজ করছে।উল্লেখ্য, উত্তর কাট্টলী মোস্তফা হাকিম কলেজে এর আগেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও কমিটি গঠনে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছিল। এবারের ঘটনার পর কলেজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ আরও তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।পিএম
Source: সময়ের কন্ঠস্বর