সামুদ্রিক মাছের প্রজনন, উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্যসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) থেকে দেশের সমুদ্রসীমায় শুরু হয়েছে ৫৮ দিনের মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। সরকার এই সময়কালে যেকোনো আকারের মৎস্য নৌযান দ্বারা যেকোনো প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ আহরণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মোতায়েন থাকবে মোবাইল টিম, মনিটরিং টিম ও তদারকির জন্য সার্ভেলেন্স ইউনিট। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে উপকূলীয় জেলাগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক সমন্বয় চলছে।চট্টগ্রাম জেলার পতেঙ্গা, হালিশহর, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও সন্দ্বীপসহ পাঁচটি উপকূলীয় উপজেলা ও নগর এলাকার জেলেরা এ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। চট্টগ্রামের মোট ১৫ উপজেলায় জেলের সংখ্যা ৫৩ হাজারের অধিক, যার মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার। এ সময় তাঁরা কেউই সাগরে মাছ ধরতে পারবেন না।চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ৫৮ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকালে জেলেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক জেলেকে ৭৭ কেজি করে চাল বিতরণের পরিকল্পনা করেছে। ২০২৪ সালে যেখানে ২৭ হাজার জেলে এ সুবিধা পেয়েছিলেন, সেখানে চলতি বছরে এই সংখ্যা ৪০ হাজারে উন্নীত করার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।দেশে বর্তমানে বার্ষিক মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ ৪৭ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। এর মধ্যে একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ইলিশ মাছের, যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৫ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। দেশের মানুষের মাথাপিছু দৈনিক মাছের চাহিদা ৬২ গ্রাম হলেও গড়ে একজন মানুষ খাচ্ছেন ৬৭.২৫ গ্রাম। এ তথ্যের ভিত্তিতে উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এই নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।প্রসঙ্গত, পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। তবে চলতি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞার সময়সূচি পরিবর্তন করে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন নির্ধারণ করেছে।নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে মেরিন ফিশারিজ সার্ভেলেন্স ইউনিটের চেকপোস্টে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া সমুদ্রগামী সকল নৌযানকে তীরে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রতীরবর্তী বরফকলগুলোকে বরফ উৎপাদন সীমিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে নিষিদ্ধ সময়ে মৎস্য সংরক্ষণের কোনো সুযোগ না থাকে। এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, “মাছের প্রজনন ও উৎপাদনের জন্য সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার টেকসই মৎস্য আহরণ নিশ্চিত করতেই ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মৎস্যজীবীদের সহযোগিতা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর