টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী আনন্দ শোভাযাত্রা এবছর ছিল অনেকটাই প্রাণহীন ও নিস্তেজ। জনসমাগম, সাজসজ্জা ও সাংস্কৃতিক উচ্ছ্বাস সব দিক দিয়েই এবারের আয়োজনটি বিগত বছরের তুলনায় ছিল যথেষ্ট দুর্বল। ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ভূঞাপুরে কি ধ্বংসের মুখে পড়ছে বৈশাখের প্রাণের শোভাযাত্রা?গত বছর যেখানে বৈশাখী শোভাযাত্রা ছিল রঙিন মুখোশ, লোকজ শিল্প, পটচিত্র ও ঢাক-ঢোলের আনন্দঘন পরিবেশে ভরপুর, এবারে তেমন চিত্র আর দেখা যায়নি। জনসমাগম ছিল আশানুরূপ নয়। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা যায়নি অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী বা সাধারণ মানুষকে। অনেকেই বলছেন, ব্যক্তিগত ব্যস্ততা এবং উৎসব উদযাপনে আগ্রহের অভাবই এর প্রধান কারণ।শোভাযাত্রার সাজসজ্জায়ও ছিল চোখে পড়ার মতো ঘাটতি। চোখ ধাঁধানো কোনো মুখোশ বা লোকজ ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টাও ছিল না। অনেকটা দায়সারা অনুষ্ঠান মনে হয়েছে অনেক দর্শনার্থীর কাছেই। স্থানীয় এক সাংস্কৃতিক কর্মী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী তালুকদার বলেন “আগে আমরা সবাই মিলে একমাস ধরে প্রস্তুতি নিতাম। ঘোড়া দৌড় দেখতাম, ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা দেখতাম। এখন সেই আগ্রহ আর দেখা যায় না, যেন কেবল আনুষ্ঠানিকতা পালন।”সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, ভূঞাপুর উপজেলা চত্তরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের একটা ব্যানারে সামান্য সংখ্যক সদস্য এবং হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করতে এসেছে। তবে তাদের মধ্যে যথেষ্ট সাজসজ্জার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ভূঞাপুর শাখা সংসদ প্রতিবছরই আনন্দ শোভাযাত্রায় বিশাল ভূমিকা পালন করে। এবার তারাও আকর্ষনীয় কোন চিত্র তুলে ধরতে ব্যার্থ হয়েছেন। উদীচীর অনেক সদস্য সনাতন ধর্মের অনুসারী থাকায় অজানা কারনে তারাও অংশগ্রহন করতে পারেনি। ভূঞাপুর থিয়েটার, ধুমকেতু, ফুলরেনু খেলাঘর, ভুসাস, জলসা সহ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আওতায় যে সব সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে তারাও তাদের সদস্যদের নিয়ে শোভাযাত্রায় যোগ দিতে দেখাযায়নি। শোভাযাত্রায় প্রতিবছর ঘোড়দৌড়, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, পালকী, কামাড়, কুমাড়, তাতী, জেলে, বাউল, হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ,  খিষ্টান, ইত্যাদি সাজে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করতেন। এতে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাকে একটু আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। বাংলার আবহমান চিত্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে প্রতিবছর এই আয়োজন করা হয়। যেটা প্রতিটি বাঙালির প্রাণের উৎসব। এখানে ধর্মীয় সম্প্রিতীর একটা মেল বন্ধন তৈরি হয়। সকল ধর্মের মানুষ এখানে অংশ নেয়।এবার অজানা কারনে তাদের দেখা যায়নি।স্থানীয় কবি হারুন অর রশিদ হিটলার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে শোভাযাত্রার আমরা অংশগ্রহন করেছি কিন্তু গতবারের তুলনায় অনেককিছু মিস করেছি। ভূঞাপুরে প্রথম বৈশাখী মেলার আয়োজন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।  তারপর থেকে ৩২ বছর যাবৎ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রচেষ্টায় বৈশাখী মেলার  আয়োজন করা হয়। কিন্তু এস এস সি পরিক্ষার কারনে মেলার আয়োজন করা হয়নি।সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ৫ দিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করা হলেও এবার আয়োজন করতে পারেনি। এ বিষয়ে ভূঞাপুর  সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান সরোয়ার লাভলু বলেন, চলমান এস এস সি পরিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতি হতে পারে বিধায় এবার আমরা মেলার আয়োজন করিনি।এ অবস্থা ভূঞাপুরের সংস্কৃতি প্রেমী মানুষের মনে প্রশ্ন জাগাচ্ছে, কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রাণের উৎসব? এক সময় এই শোভাযাত্রা ছিল সকল বয়সের মানুষের মিলনমেলা, এখন তা যেন কেবল নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের সীমিত আয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।ভবিষ্যতে এ উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে স্থানীয় প্রশাসন, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে স্কুল-কলেজভিত্তিক বৈশাখী কর্মসূচি ও লোকজ ঐতিহ্যচর্চা চালু করা যেতে পারে।ভূঞাপুরবাসীর প্রত্যাশা, আবারও প্রাণ ফিরে পাক বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা, আবারও জেগে উঠুক মাটির গন্ধে বোনা আবহমান বাংলার রঙ।এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
আ.লীগ হিন্দুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়: ফখরুল
আ.লীগ হিন্দুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়: ফখরুল

‘আওয়ামী লীগ যখন জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারে না তখন হিন্দুদের ঢাল হিসেবে সামনে ব্যবহার করতে চায়। এটা হচ্ছে তাদের একটি Read more

বাংলাদেশে ফিনটেক সেক্টরে বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান
বাংলাদেশে ফিনটেক সেক্টরে বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান

বাংলাদেশে ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজি (ফিনটেক) সেক্টরে বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন