চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা বাধার মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) জেলা আইনজীবী সমিতির পাঠাগারে এ ঘটনাটি ঘটে।১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনে এমন একটি ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সমিতির ভেতরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সভাপতি পদপ্রার্থী আবদুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ফখরুদ্দিন চৌধুরীসহ চারজন আওয়ামীপন্থী প্রার্থী লিখিত অভিযোগ দেন জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মকবুল কাদের চৌধুরীর কাছে।লিখিত অভিযোগে বলা হয়, মনোনয়নপত্র কেনার জন্য তারা দুপুরে সমিতির পাঠাগারে গেলে সেখানে কিছু আইনজীবীর পাশাপাশি বহিরাগতরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রার্থীদের বাধা দেয় এবং মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে না দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনার পর নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। অভিযোগে আরও বলা হয়, বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্যকে জানানো হলেও কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মকবুল কাদের চৌধুরী সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, “সাত-আটটি অভিযোগ পেয়েছি। সব অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”তবে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমেদ বলেন, “বিকেল চারটার পর অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়কের কাছ থেকে অভিযোগগুলো পেয়েছি। এর পর আর তেমন কিছু করার সুযোগ নেই।”এর আগে, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ১০ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু মাত্র ছয় দিন আগে, অর্থাৎ ৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান মোহাম্মদ সোলায়মানসহ পাঁচজন সদস্য পদত্যাগ করেন। তাদের দাবি, বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ ও আওয়ামীপন্থী সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় তারা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে অপারগবোধ করেছেন।পদত্যাগপত্রে বলা হয়, আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীরা সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েনের দাবি জানান, অন্যদিকে ঐক্য পরিষদ নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের প্রতিপক্ষের মনোনয়ন বাতিলের দাবি করে। ফলে একটি স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন পদত্যাগী কর্মকর্তারা।পরবর্তীতে ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয় এবং নতুন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।চট্টগ্রামের আইনজীবী সমাজে ঐতিহ্যগতভাবে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ বছর সেই বিভাজন আরও তীব্র রূপ নিয়েছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় বাধা প্রদান ও প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঘটনায় স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।আইনজীবী মহলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে, যা শুধু নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে না, বরং আইনজীবী সমাজের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ণ করবে।নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল, নিরপেক্ষ এবং জবাবদিহিতামূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।আরইউ
Source: সময়ের কন্ঠস্বর