চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ১৩২ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো একটি এডহক কমিটির অধীনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বার কাউন্সিল নির্বাচন। নানা নাটকীয়তা, উত্তেজনা, পদত্যাগ ও কমিশন পুনর্গঠনের পর অবশেষে দ্বিতীয়বারের মতো ঘোষিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন–২০২৫ এর তফশিল।গতকাল মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তফশিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, আগামী ১৬ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সমিতির অডিটোরিয়ামে একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।তফশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ সময় আইনজীবীরা বার লাইব্রেরিতে অবস্থিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। পরদিন ১১ এপ্রিল শুক্রবার, একই সময়ের মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে ১২ এপ্রিল, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে। ওই দিনই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা ঘিরে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখা দিলেও সূত্রমতে, ২৭ জানুয়ারি প্রার্থীরা নিজে উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন—যা হয়তো পূর্ব তফশিলের একটি ছাপ বা তথ্যগত ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।নির্বাচন আয়োজনে নেতৃত্ব দিচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটি, যা গঠিত হয় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। এ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মকবুল কাদের চৌধুরী এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট শামসুল আলম, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, জহুরুল আলম ও রফিক আহাম্মদ।অনেক আইনজীবীরা মনে করছেন, বিগত সব রীতি ও প্রচলন ভেঙে এই প্রথমবারের মতো একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির মাধ্যমে আইনজীবীদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষার প্রয়াস, নিঃসন্দেহে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ পালাবদল।মূলত, চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ও বিভেদপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়। তারই জেরে নির্বাচনের মাত্র ৬ দিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পুরো কমিশন একযোগে পদত্যাগ করেন।এর আগে, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বাতিল করে পুনরায় ১৪ জানুয়ারি নতুন কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপড়েন ও অব্যবস্থাপনার কারণে কমিশন কার্যকর রাখতে ব্যর্থ হয় সমিতির কার্যকরী কমিটি।ফলে এক অনাকাঙ্ক্ষিত সঙ্কটের মুখে পড়ে বার নির্বাচন। সেই প্রেক্ষাপটেই গঠিত হয় এই এডহক কমিটি, যাদের দায়িত্ব ছিল ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করা।বর্তমানে ঘোষিত নির্বাচন কমিশনে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট তারিক আহমেদ। তার অধীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা হলেন—অ্যাডভোকেট মো. মাসুদুল আলম, মুহাম্মদ কবির হোসাইন, মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন এবং মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন শাহীন।ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ২১টি পদের জন্য মোট ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন ৫ হাজার ৪০৪ জন আইনজীবী—যা দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোটারগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত।পিএম
Source: সময়ের কন্ঠস্বর