কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং পশ্চিম পাড়ায় পারিবারিক জমি নিয়ে চাচাতো ভাইবোনদের মধ্যে সংঘর্ষে নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। রবিবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর রাজাপালং শাখার অফিস সম্পাদক ও কুতুপালং বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন। নিহত অন্য দুইজন হলেন—আব্দুল্লাহ আল মামুনের চাচাতো ভাই আব্দুল মান্নান এবং তার বোন শাহিনা বেগম। তারা সবাই একে অপরের আপন চাচাতো ভাইবোন।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে কাজ করছি। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে জমির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন এবং আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হন।ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুতুপালং বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানান, একটি পারিবারিক জমির দেওয়াল ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল। আজ তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। নিহতদের মধ্যে একজন কুতুপালং বাজার মসজিদের খতিব, অন্য দুইজন একই পরিবারের চাচাতো ভাইবোন।তিনি আরও জানান, মামুন এক পক্ষের, আর মান্নান ও শাহিনা অন্য পক্ষের সদস্য ছিলেন। সবাই একই বংশের হলেও পারিবারিক বিরোধ শেষ পর্যন্ত প্রাণহানিতে রূপ নেয়। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।স্থানীয় ধর্মীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মাওলানা মামুন একজন সম্মানিত আলেম ছিলেন। এমন একজন মানুষকে জমির মতো তুচ্ছ বিষয়ে প্রাণ হারাতে হবে, তা ভাবাই যায় না। সমাজে ধৈর্য ও সহনশীলতার বড় অভাব দেখা যাচ্ছে।’নাজিম উদ্দিন নামের স্থানীয় মুরব্বি বলেন, ‘একই পরিবারের মধ্যে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ খুবই দুঃখজনক। জমির জন্য যদি জীবন দিতে হয়, তাহলে আমাদের সামাজিক বন্ধন কোথায়? প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’ রাবেয়া খাতুন নামের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘আজ যদি মধ্যস্থতা বা গ্রাম্য সালিশ কার্যকর হতো, তাহলে এই মৃত্যু হতো না। আমাদের এলাকায় এখন দরকার শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং পারিবারিক মূল্যবোধের চর্চা।’ মোহাম্মদ জসিম নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ বহু পুরোনো, কিন্তু বিষয়টি এভাবে রক্তাক্ত হবে কেউ কল্পনা করেনি। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যেন কেউ এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটায়।’
Source: সময়ের কন্ঠস্বর