রাজশাহীতে রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হলেন এক নিরপরাধ রিকশাচালক। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে সংঘটিত সংঘর্ষে ছুরিকাহত হয়ে মারা যান গোলাম হোসেন (৪৮)। তবে পরিবারের অভিযোগ, সময়মতো চিকিৎসা পেলে হয়তো প্রাণটা রক্ষা পেত।গত শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এটি ঘিরে চার ঘণ্টাব্যাপী উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, চলে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ। সংঘর্ষে তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মূলত, এক আওয়ামী লীগ নেতার ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো ও তাঁর ভাইকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরকে কেন্দ্র করেই দুই পক্ষ মুখোমুখি হয় বলে জানা গেছে।সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরার পথে এই সংঘর্ষের মাঝে পড়েন রিকশাচালক গোলাম হোসেন। প্রতিপক্ষ ভেবে এক পক্ষের কর্মীরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।নিহতের স্ত্রী পরী বানুর অভিযোগ, গোলাম হোসেনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর বিএনপির দুই নেত্রী লাভলী খাতুন ও বীথি চিকিৎসা দিতে বাধা দেন। চিকিৎসকদের রোগী ভর্তি না করার জন্য চাপ দেওয়া হয়, যার ফলে এক ঘণ্টা দেরি হয় চিকিৎসা শুরু করতে।পরী বানু বলেন, লাভলী ও বীথি বলছিলেন, এই রোগী ভর্তি হবে না। পরে পুলিশের সহায়তায় ভর্তি করা গেলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।তিনি আরও জানান, থানায় মামলা করার চেষ্টা করলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। তবে তিনি দাবি করেন, তাঁর স্বামী হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পারতেন।মহানগর মহিলা দলের ক্রীড়া সম্পাদক বীথি এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে থাকলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।অন্যদিকে, মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “থানায় এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং মামলা নেওয়া হবে।রাজনৈতিক সংঘর্ষের বলি হওয়া এক নিরীহ রিকশাচালকের মৃত্যু নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থার মানবিকতা নিয়ে। একজন সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে যখন রাজনীতির দাবা খেলা চলে, তখন নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের আশ্বাস কতটা কার্যকর, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে গোলাম হোসেনের শোকার্ত পরিবারের মনে। এখন দেখার বিষয়, তারা কি সত্যিই বিচার পান, নাকি এটি আরও একটি ‘অমীমাংসিত মৃত্যু’ হিসেবে থেকে যায়!এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর