চট্টগ্রামে গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রশাসন সামলাচ্ছেন ১৯ নারী। যারা নিজ নিজ দপ্তরে কেউ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) পদে দায়িত্ব পালন করছেন শারমিন জাহান। বিভাগের ১১ জেলায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে সামিল রেখেছেন।প্রশাসন ক্যাডারের ২১তম ব্যাচের কর্মকর্তা শারমিন জাহান বলেন, ‘শত বাধা ডিঙিয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনে অনেক নারী সফলতার সাথে কাজ করছে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত মাঠে-ঘাটে সবখানে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে।প্রশাসনের কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ চিন্তা না করেই প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই এতদূর এসেছি। আমি কর্মক্ষেত্রে কোনও বাধার সম্মুখীন হই না।আমার কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন, অধিকার সবকিছু বিধিবদ্ধ করা আছে। তবে অন্যরা যে হয় না তা কিন্তু নয়। কর্মক্ষেত্রে সবার কাছ থেকে সহযোগিতা পাই। এরপরেও সামাজিকভাবে চলে আসা কিছু প্রথা এখনও আছে। যা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। এখন কেউ নারীদের কাজে বাধা দিলে সেই প্রতিবন্ধকতাও ডিঙিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মতো ক্ষমতা নারীদের আছে’।প্রতিটি জেলার মুখ্য কর্মকর্তা হলেন জেলা প্রশাসক। ডেপুটি কমিশনার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা কালেক্টরের মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন একজন জেলা প্রশাসক। ভূমি ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমন্বয় সাধনসহ সাধারণ ও স্থানীয় নির্বাচনে মন্ত্রিপরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন জেলা প্রশাসক।  দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন ফরিদা খানম। প্রশাসন ক্যাডারের ২৫ তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রামে যোগদানের পর থেকেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন। ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসব করেছেন। রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন কঠোর উদ্যোগ।  কর্মক্ষেত্রে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘আগে যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে নারীরা ভালো কাজ করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের সাফল্য ভালো। শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কথা বলছি না, শিক্ষা আর ব্যবসাতেও মেয়েরা ভালো করছে। আমাদের এখন প্রায় ১৬জন নারী ডিসি আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নারীদের দিয়ে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। অতীতের তুলনায় অনেক বেশি নারী ডিসি পদে আছেন। একটা সময় যে নারীকে বাইসাইকেল চালানোর অপরাধে কটাক্ষ করতো, সেই নারী এখন বৈমানিক। নারীরা এখন সফল উদ্যোক্তা।  জেলা প্রশাসক বলেন, নারীদের পরিবার সামলেই কাজ করতে হয়। আমাদের স্বামীরা ব্যবসা করে, চাকরি করে। আমাদের সোসাইটি এমনভাবে গড়ে উঠেছে- স্বামী কখনও তার স্ত্রীর জন্য কর্মস্থল ত্যাগ করে না। কিন্তু স্ত্রী তার স্বামীর জন্য কর্মস্থল ত্যাগ করে। চ্যালেঞ্জও কিছু আছে। এখন আগের তুলনায় মেয়েরা মাঠে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে।  চট্টগ্রাম প্রশাসনে শীর্ষ পর্যায়ে কর্মরত এই দুই নারী ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে তিনজন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে সাতজন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদে সাতজন নারী কর্মরত আছেন।  তারা হলেন- মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন, আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার, কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা জান্নাত, রাঙ্গুনিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজান হোসাইন, বোয়ালখালীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কানিজ ফাতেমা, সাতকানিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারিস্তা করিম, লোহাগাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল লায়েল, হাটহাজারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুৎফুন নাহার শারমীন, চন্দনাইশের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডিপ্লোমেসি চাকমা, কর্ণফুলীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা।অন্যদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত আছেন আরডিসি পান্না আক্তার, সহকারী কমিশনার খন্দকার ফারজানা নাজনীন সেতু, শিফাত বিনতে আরা, আফরিন ফারজানা পিংকি, জাকিয়া মুমতাহিনা, ফারজানা রহমান মীম, রুমানা পারভীন তানিয়া।এই নারী কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসনে একজন পুরুষ কর্মকর্তা যোগদানের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাবনা থাকে- তিনি অনেক কাজ করতে পারবেন। নারী হিসেবে যোগদান করলে ভিন্নভাবে দেখে। যদিও কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনও নারী পিছিয়ে নেই। সমাজের কাঠামো ভেঙ্গে যারা এ পর্যন্ত এসেছে তারা অবশ্যই দক্ষ বলেই এসেছে। অথচ একজন নারী কর্মকর্তাকে বারবার দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে প্রমাণ করতে হয়। কিন্তু পুরুষ মানেই সবাই মনে করে দক্ষ কর্মকর্তা। এটা সামাজিকভাবে বহুদিন ধরে হয়ে আসছে। যদিও এখন পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।  শুধু প্রশাসন ক্যাডারে নয়, সকল ক্যাডারেই নারীরা এগিয়েছে। শিক্ষা, ব্যবসাতেও নারীরা এগিয়ে আসছে। সংসার সামলে নিজের কাঁধে অর্পিত দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করছেন নারীরা। এক্ষেত্রে পরিবার থেকে সহায়তা পান নারী কর্মকর্তারা।  আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘রাতে অনেক সময় মোবাইল কোর্টে বের হতে হয়। বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই কাজ করতে হয়। তবে নারী হিসেবে সুবিধা একটু বেশিই পাই। নারী কর্মকর্তা হওয়ায় অনেকে চাইলেও অনৈতিক সুবিধা নিতে সংকোচ করে। বাচ্চা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী থাকার পরেও যখন তখন দাপ্তরিক কারণে বের হতে হয়, পারিবারিক সাপোর্টটা বেশি পাই বলেই তখন কাজ করতে সুবিধা হয়’। 

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা তাভিসিনের আমন্ত্রণে ৬ দিনের সরকারি সফরে আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২৪ বছর পর উত্তর কোরিয়া সফরে পুতিন, উদ্বিগ্ন পশ্চিমারা
২৪ বছর পর উত্তর কোরিয়া সফরে পুতিন, উদ্বিগ্ন পশ্চিমারা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে উত্তর কোরিয়া যাচ্ছেন।

খালেদা জিয়ার ১১ মামলার শুনানি ২৯ জুলাই 
খালেদা জিয়ার ১১ মামলার শুনানি ২৯ জুলাই 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোসহ ১১ মামলার শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামী ২৯ জুলাই  ধার্য করেছেন Read more

রাজশাহীর কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম 
রাজশাহীর কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম 

মঙ্গলবার (৭ মে) বেলা ১১টা থেকে তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় ব্যালট বাক্সসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যালটে সিল মারার সময় হাতেনাতে ধরা পোলিং এজেন্ট
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যালটে সিল মারার সময় হাতেনাতে ধরা পোলিং এজেন্ট

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মারার সময় হাতেনাতে একজনকে আটক করা হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উ‌দ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উ‌দ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন