বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘের প্রধান সংগঠন হচ্ছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি জাতিসংঘ সচিবালয়ের আওতাধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এর কর্মকাণ্ড জাতিসংঘ সনদ ও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে বর্ণিত আদর্শ ও দায়িত্ব থেকে এসেছে।জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য হলো বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য মানবাধিকার নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সংস্থাটি কাজ করছে বহুস্তরীয় এবং বহুমুখী কার্যক্রম নিয়ে। আসুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই সংস্থার প্রধান কাজের ক্ষেত্রগুলো-১) সর্বজনীন মানবাধিকার রক্ষায় অঙ্গীকার বাস্তবায়ন,২) আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরে মানবাধিকার বিষয়ে নেতৃত্ব প্রদান,৩) মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা,৪) জাতিসংঘ ব্যবস্থার মধ্যে মানবাধিকার-সংক্রান্ত প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত ও সমন্বয় করা,৫) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি অনুমোদন ও বাস্তবায়নে উৎসাহ দেওয়া,৬) মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিক্রিয়া জানানো এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া,৭) সংঘাত বা অপব্যবহারের দিকে নিয়ে যেতে পারে—এমন পরিস্থিতি প্রশমিত করতে প্রতিরোধমূলক মানবাধিকার কার্যক্রম গ্রহণ করা।৮) সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে স্বাধীন জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান (এনএইচআরআই) গঠন ও সমর্থন করা,৯) ক্ষেত্রভিত্তিক পর্যবেক্ষণ, শিক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা,১০) জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা এবং চুক্তি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোকে, যেমন—মানবাধিকার কাউন্সিল এবং বিভিন্ন চুক্তি সংস্থা, বাস্তব ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া,এছাড়াও সংস্থাটির কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো জাতিসংঘের তিনটি প্রধান স্তম্ভ—শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও মানবাধিকার—এই তিনকে একত্রিত করে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।ওএইচসিএইচআরের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। এর বাইরে রয়েছে নিউইয়র্কে অফিস, যেটি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মানবাধিকার বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এর বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং দেশিয় কার্যালয় আছে। এগুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী উপস্থিতি বজায় রাখে জাতিসংঘের এই মানবাধিকার সংস্থা।যেসকল আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে ওএইচসিএইচআর বৃহত্তর আঞ্চলে মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখে সেগুলো হলো-পূর্ব আফ্রিকা (আদ্দিস আবাবা), দক্ষিণ আফ্রিকা (প্রিটোরিয়া), পশ্চিম আফ্রিকা (ডাকার), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (ব্যাংকক), প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (সুভা), মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (বৈরুত), মধ্য এশিয়া (বিশকেক), ইউরোপ (ব্রাসেলস), মধ্য আমেরিকা (পানামা সিটি), দক্ষিণ আমেরিকা (সান্তিয়াগো দে চিলি)।এর বাইরেও ওএইচসিএইচআরের ১৮টি দেশিয় বা সতন্ত্র কার্যালয় আছে। দেশভিত্তিক কার্যালয়গুলো সাধারণত স্বাগতিক সরকারের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এসব কার্যালয়ের মূল কাজ হলো স্থানীয় মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, প্রচার, এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান। বর্তমানে যেসকল দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় আছে সেগুলো হলো: বুর্কিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, সুদান, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, তিউনিসিয়া, গিনি, নাইজার এবং দক্ষিণ কোরিয়া।এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ বা সংঘাত-পরবর্তী এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ওএইচসিএইচআর কাজ করছে। আফগানিস্তান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, হাইতি, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, কোসোভোর মতো অঞ্চলে সংস্থাটি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে।জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তব মাঠপর্যায়ে নেমে কাজ করে। ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো, রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কার্যকর সংলাপ, এবং মানবাধিকার শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের সংস্কৃতিকে জোরদার করছে সংস্থাটি।আরডি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর