কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে হঠাৎ করে ফুলেফেঁপে উঠেছিল কুমিল্লার গোমতী নদী। পানি বাড়তে বাড়তে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছিল। এতে নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে দেখা দেয় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। নদীর পানি কমতে থাকায় স্বস্তি ফিরছে কুমিল্লার গোমতীপাড়ের মানুষের মুখে মুখে।পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেল ৩টায় গোমতী নদীর পানির স্তর রেকর্ড করা হয় ৮.৬৫ মিটার, যা বিপৎসীমা ১১.৩০ মিটার থেকে প্রায় ২.৬৫ মিটার নিচে। আগের রাত ১২টায় এ স্তর ছিল ৯.৩৩ মিটার। অর্থাৎ মাত্র ১৫ ঘণ্টায় পানির স্তর নেমেছে ০.৬৮ মিটার। কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় উজান থেকে ঢলের চাপ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে নদীর পানি এখন ক্রমশ নিম্নমুখী।পানি কমতে শুরু করায় গোমতীর পাড়ঘেঁষা চরাঞ্চল ও নিম্নভূমির অনেক এলাকা থেকে ইতোমধ্যে পানি সরে যেতে শুরু করেছে। তবে শহরের কিছু নিচু এলাকায় এখনো সাময়িক জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। স্থানীয়দের মাঝে এখনো আতঙ্কের রেশ থাকলেও স্বস্তির ছোঁয়া মিলছে।গোমতী নদীর চরপাড়ার বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ‘তিন দিন আগেও নদীর পানি উঠেই যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এবার আর রক্ষা নেই। এখন দেখি পানি একটু একটু করে নামছে, তাই বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কিছুটা স্বস্তিতে আছি।’নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকার গৃহবধূ শাহিনা আক্তার জানান, ‘রান্নাঘর ডুবে গেছিল। এখন পানি কমেছে, তবে ঘরে ফেরা যাচ্ছে না, সব ভিজে গেছে।’চরাঞ্চলের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সবজির জমি ডুবে গেছিল, অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তবে আল্লাহর রহমতে পানি নামতেছে। এখন নতুন করে আবার লাগাবো চিন্তা করতেছি।’পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে খুব দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে আমরা এখনো সতর্ক অবস্থানে আছি।’জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলায় আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম। ৫৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার, জিআর চাল ও নগদ অর্থ মজুত রয়েছে। এখন নদীর পানি কমতে থাকায় আমাদের উদ্বেগ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।’এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর