গ্রীষ্মকালের একটি জনপ্রিয় ফল কালো জাম। দেশীয় এই ফলটির স্থায়িত্বকাল অন্যান্য ফলের তুলনায় খুবই কম। জাম খুবই পুষ্টিকর এবং এটি ওষুধের কাজও করে। এ ফল শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতাও। এ ছাড়া জামের বীজ, পাতা এবং ছাল- সবই ব্যবহার করা হয় আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, আয়রন, মিনারেল, জিংক, কপার, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্যালিসাইলেট।জাম খেলে পেট ঠান্ডা থাকে এবং হজমশক্তি বাড়ে। বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়ার মতো সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। জামে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফ্যাঙ্গাল উপাদান, যা জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুখ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কম, তাদের জন্য জাম খাওয়া খুবই উপকারী।জামের উপকারিতা: গ্রীষ্মের একটি জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল হলো জাম। কালচে বেগুনি রঙের এই টক-মিষ্টি স্বাদের ফলে রয়েছে অসংখ্য ওষুধিগুণ। নিচে জামের উপকারিতাগুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো—১) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: জামে রয়েছে জ্যামবোলিন ও জ্যামোসিন নামক উপাদান, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। জাম ও এর বিচি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার।২) হজমশক্তি বাড়ায়: জামে থাকা ফাইবার ও ট্যানিন উপাদান হজমে সাহায্য করে। এটি বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর।৩) রক্ত পরিষ্কার করে: জামে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং রক্তকে বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকও হয় উজ্জ্বল ও সতেজ।৪) ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন সি, ফেনলিক যৌগ ও অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করে।৫) ওজন কমাতে সহায়ক: জামে ক্যালোরি কম কিন্তু ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি পেট ভরিয়ে রাখে, ক্ষুধা কমায় এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে রাখে।৬) চর্মরোগ ও ব্রণ প্রতিরোধে উপকারী: জাম বা এর বীজগুঁড়োতে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ। এটি ব্রণ, ফুসকুড়ি ও চুলকানির জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।৭) মূত্রনালীর সমস্যা কমায়: জামে রয়েছে প্রাকৃতিক ডাইউরেটিক গুণ, যা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন প্রতিরোধে কার্যকর।৮) মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: জাম চিবালে মুখের দুর্গন্ধ কমে ও মাড়ি শক্ত হয়। এটি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমিয়ে প্রাকৃতিক মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে কাজ করে।৯) রক্তশূন্যতায় উপকারী: জামে প্রচুর আয়রন থাকায় এটি হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।১০) লিভার ও কিডনি সুরক্ষা দেয়: জামে থাকা ডিটক্সিফায়িং উপাদান শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বজায় রাখে।১১) ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে: ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষয় রোধ করে, বিশেষত ত্বক ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।১২) জ্বর ও প্রদাহে উপকারী: আয়ুর্বেদ মতে, জাম শরীর ঠান্ডা রাখে এবং অল্প জ্বর বা অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।১৩) অক্সিজেনের ভারসাম্য: জাম ভিটামিন এ, সি, আয়রন এবং মিনারেলে ভরপুর। তাই রক্তে অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এই মৌসুমে জাম খাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।১৪) রক্ত ও চোখ: রক্তে প্রয়োজনীয় উপাদান হিমোগ্লোবিন এবং আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে জাম কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। রক্ত পরিষ্কার করার পাশাপাশি এটি ত্বককেও সুস্থ রাখে। চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও জাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এসকে/এইচএ
Source: সময়ের কন্ঠস্বর