কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার মানিকারচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামে অবস্থিত কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি এক সময় ছিল এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষের ঐক্যের প্রতীক। আজ সেই মসজিদটি দখল, দ্বন্দ্ব ও বিভাজনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।প্রায় ৪৫ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ মসজিদের ভূমি জনাব বাবুর আলী ও আবিদ আলী সাহেব দান করেন। ওয়াকফকৃত এই জমির একটি অংশ বহু বছর ধরে ‘আস্তানা ঘর’ নির্মাণ করে দখল করে রাখা হয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই ঘরটি কুরাখাল নামের এক কথিত পীরের অনুসারীরা জলসা ও আস্তানা চালানোর কাজে ব্যবহার করছেন। এতে করে ইসলামের মসজিদভিত্তিক শালীনতা ও ঐক্যবোধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার নারী-পুরুষের মিশ্র মাহফিল আয়োজন, তাবলীগ জামাতের প্রবেশে বাধা দেওয়া এবং পীরপন্থী কর্মকাণ্ড চালানোয় গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আশপাশের ৩টি মসজিদে যেখানে তাবলীগ জামাত শান্তিপূর্ণভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতে পারছে, সেখানে আমিরাবাদ কেন্দ্রীয় মসজিদে এমন বাধা ইসলামি আদর্শের বিরোধী বলেই মনে করছেন অনেকেই।স্থানীয়ভাবে প্রবাসী ও মসজিদের উন্নয়নে অর্থানুদানকারী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ এক পক্ষ পীরের নামে ঘর তুলে বসেছে, কাল অন্য পক্ষ আসবে। মসজিদের জায়গা তাহলে থাকবে কোথায়? এটি কারও আস্তানা নয়, এটি আল্লাহর ঘর। আমাদের জানাজার স্থানটি পর্যন্ত সংকুচিত হয়ে গেছে। এমনকি কেউ মারা গেলে ওই আস্তানা থেকে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয় বলেও জানতে পেরেছি।’ এছাড়া মসজিদের বর্তমান সভাপতি মোখলেছুর রহমান নিজে পীরের অনুসারী হওয়ায়, তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাঁর বিরুদ্ধে মসজিদের ব্যবস্থাপনায় পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।স্থানীয় তরুণদের মধ্যে মো. মাইন উদ্দিন, সাদ্দাম হোসেন, মো. ইসলাম, আজাদ আবুল কালাম ও আশরাফুল ইসলাম রেজাউল বলেন, ‘এই মসজিদ সবার জন্য। এখানে কোনো দলাদলি, আধিপত্য কিংবা দখলদারিত্ব চলবে না। আল্লাহর ঘরে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একটি মসজিদ কেবল নামাজের স্থান নয়, এটি মুসলমান সমাজের ঐক্য ও সহাবস্থানের প্রতীক। অথচ আজ সেই মসজিদই বিভেদ ও অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়াকফকৃত জমির ব্যবহার নিয়ে স্বচ্ছতা না থাকলে ভবিষ্যতে এই সংকট আরও তীব্র হতে পারে।’গ্রামবাসীরা দাবি জানিয়েছেন, ওয়াকফকৃত জমিতে নির্মিত কথিত আস্তানা ঘর দ্রুত অপসারণ করতে হবে। পাশাপাশি মসজিদটি যেন সব ধারার মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত থাকে, বিশেষ করে তাবলীগ জামাতের সদস্যরা যাতে এখানে অবাধে দাওয়াতি কাজ ও ইবাদত করতে পারেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।তাঁরা আরও বলেন, ‘মসজিদের পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা আনতে একটি গ্রহণযোগ্য ও সর্বজনগ্রাহ্য পরিচালনা কমিটি গঠন জরুরি। এই কমিটি ইসলামি শরিয়াহর আলোকে মসজিদের পবিত্রতা, মর্যাদা এবং সাম্য বজায় রাখবে।’আমিরাবাদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের এই সংকট শুধু একটি গ্রামের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, বরং এটি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ঘিরে তৈরি হওয়া দখলদারিত্ব ও বিভাজনের এক বাস্তব চিত্র। মসজিদ যেন কোনো ব্যক্তিগত আধিপত্যের জায়গা না হয়ে, প্রকৃত অর্থে আল্লাহর ঘর হিসেবে সকল মুসলমানের জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত থাকে, এমনটাই চায় এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ। এই চাওয়া শুধু আমিরাবাদ নয়, গোটা সমাজের পক্ষ থেকেই উঠে আসা সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি।স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ‘তাদের কার্যকলাপ শরিয়তসম্মত নয়, এসব ইসলাম সমর্থন করে না। আপনি চাইলে এলাকার আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেও জানতে পারবেন, সবাই এই তথাকথিত আস্তানাগুলোর বিপক্ষে। আমরা গ্রামবাসী এসব আস্তানা ও বিভ্রান্তিকর কার্যক্রম চাই না। এসব অপকর্ম বন্ধে আমাদের লোকজন সচেষ্ট রয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করব, যাতে তারা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’এসকে/এইচএ
Source: সময়ের কন্ঠস্বর