যশোরে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ৩ বছর পর ভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম আমির হোসেন (৬৮)।বুধবার (১৮ জুন) ভোরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আমির হোসেন বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর গ্রামের মৃত শেখ মখছেদ আলীর ছেলে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ফের করোনার দাপট শুরু হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর।জনগণ সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আইসিইউ সেবাসহ সব ধরনের মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জুন সার্জারি সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আমির হোসেন। তিনি মডেল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার তার শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। চিকিৎসকের নির্দেশে সোমবার নমুনা পরীক্ষা করলে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পরে চিকিৎসক তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেফার্ড করেন।আইসিইউ’র ইনচার্জ ডা. রবিউল ইসলাম তুহিন জানান, করোনায় আক্রান্ত আমির হোসেন মারা গেছেন। তার মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, করোনা সন্দিগ্ধ আরও ৩ রোগী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তাদের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলে নিশ্চিত হওয়া যাবে তারা করোনায় আক্রান্ত কিনা। তিনি জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু হলে করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়তে পারে।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, কিডনিজনিত সমস্যা ও পেটে ব্যথা নিয়ে আমির হোসেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তার জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। বুধবার ভোর ৬ টার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমির হোসেন মারা যান। তিনি আরও জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আলাদা ইউনিট গঠন করা হয়েছে। আক্রান্তদের সকল চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত।যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক বলেন, প্রথম পর্যায়ে করোনায় চরম ঝুঁকির মধ্যে ছিল যশোর। করোনা বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। শেষ মৃত্যু হয়েছিল ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে আমির হোসেন নামে একজন মারা গেছেন।যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, যশোর জেলায় মোট ২ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। বেসরকারিভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। ৩ বছর পর যশোরে করোনায় আক্রান্ত প্রথম কোনো রোগী মারা গেলেন। যশোর জেলা আবারও করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সকলকে অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা, হাসি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সিভিল সার্জন আরও জানান, বর্তমান ২২শ’ করোনার টিকা মজুদ রয়েছে। যশোর পৌরসভার মাধ্যমে মানুষ এই টিকা গ্রহণ করতে পারবেন। করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করতে প্রস্তুত রয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। মন্ত্রণালয়ে কিটের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। শিগগির কিট পেয়ে যাবেন। আগামী সপ্তাহ থেকে যবিপ্রবিতে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে।যবিপ্রবির ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) আব্দুল মজিদ জানান, যবিপ্রবি করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে প্রস্তুত রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে যশোর জেলার সিভিল সার্জনকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কীট সরবরাহের বিষয়ে অবগত করেছি। কীট সরবরাহ করলেই আমরা করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু করব। এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর